প্রাইম ভিশন ডেস্ক »
ভিয়েতনামের শহর থেকে গ্রাম, সমুদ্র থেকে পাহাড়—সব জায়গায় মোটরবাইক চালিয়ে ঘুরে দেখা এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। নিজের গতিতে ভিয়েতনাম ঘুরে দেখতে চাইলে মোটরবাইক হতে পারে আপনার সেরা সঙ্গী। তবে নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় ভ্রমণের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম ও প্রস্তুতি জানা জরুরি। ভিন্ন কোনো দেশে যানবাহনের সংখ্যা, ট্রাফিকের ধরন ও আইনের ভিন্নতা অনেক সময় বিদেশিদের জন্য বিভ্রান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিভ্রান্তি থেকে মুক্ত থাকতে জেনে নিন এই ছয় পরামর্শ।
হো চি মিন সিটির একটি মোটরবাইক ট্যুর প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা তুয়ান হাং মোটরবাইক ব্যবহারে ইচ্ছুক বিদেশি ভ্রমণকারীদের জন্য দিয়েছেন ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ টিপস।
নথিপত্র প্রস্তুত রাখুন
হ্যানয়, দা নাং, হো চি মিন সিটি, হোই আন কিংবা নাহা ট্রাংয়ের মতো ভিয়েতনামের জনপ্রিয় শহগুলোতে অসংখ্য মোটরবাইক ভাড়া দেওয়ার দোকান রয়েছে। গুগল ম্যাপস ও ট্রিপ অ্যাডভাইজারের মতো সাইটে রিভিউ দেখে প্রথমেই ভালো দোকান নির্বাচন করুন।
যে নথিগুলো প্রয়োজন —
পাসপোর্ট (মূল বা নোটারাইজড কপি)
আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং পারমিট (আইডিপি) অথবা ভিয়েতনামী ড্রাইভিং লাইসেন্স।
বিদেশি লাইসেন্স থাকলেও আইডিপি ছাড়া সমস্যা হতে পারে।
ভাড়ার ডিপোজিট ২০ থেকে ৭৮ ডলার।
আপনার মূল পাসপোর্ট দোকানে জমা না দিয়ে একটি নোটারাইজড কপি জমা দিন। ট্রাভেল ইনস্যুরেন্স করা থাকলে তা মোটরবাইক দুর্ঘটনা কাভার করে কি না, তা যাচাই করুন।
সঠিক বাইক নির্বাচন করুন
স্বল্প দূরত্বে ঘোরার জন্য স্কুটার ভালো। এটি চালানো সহজ এবং এটি ব্যস্ত শহরের জন্য উপযুক্ত। ম্যানুয়াল বাইক নিলে তেল কম খরচ হবে। এটি দীর্ঘ দূরত্বের জন্য ভালো। দীর্ঘ বা দুর্গম রুটের জন্য ১৭৫ সিসি বা তার বেশি সিসির লার্জ ডিসপ্লেসমেন্ট বাইক নিতে পারেন। এগুলো চালাতে এটু ক্লাস লাইসেন্স প্রয়োজন। বাইক নেওয়ার আগে ব্রেক, লাইট, হর্ন, ইন্ডিকেটর, মিরর ইত্যাদি ঠিক আছে কি না, দেখে নিন। বাইক সাধারণত অল্প তেল নিয়ে দেওয়া হয়, তাই রেন্টের পরপরই রিফুয়েল করুন। বাইকের ছবি তুলে রাখুন, যেন পরে ক্ষতির দায় এড়ানো যায়।
ভাড়া
প্রতিদিনের জন্য গুনতে হবে বাইকের ভাড়া। স্কুটারের ক্ষেত্রে ৪ দশমিক ৭২ থেকে ৭ দশমিক ৮৭ ডলার। ম্যানুয়াল বাইক হলে ৩ দশমিক ১৫ থেকে ৫ দশমিক ৯০ ডলার। আর বড় বাইক হলে প্রতিদিনের ভাড়া শুরু হয় ৩১ দশমিক ৫০ ডলার থেকে। ভাড়ার বিষয়টি পরিবর্তনশীল।
বাইক ভাড়া নেওয়ার আগে পাসপোর্টসহ কিছু ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে। ছবি: সংগৃহীত
বাইক ভাড়া নেওয়ার আগে পাসপোর্টসহ কিছু ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে। ছবি: সংগৃহীত
চালানোর সময় সতর্ক থাকুন
ভিয়েতনামে যানবাহনের সংখ্যা বেশি। ফলে ট্রাফিক অনেক সময় বিশৃঙ্খল মনে হতে পারে। বাস ও ট্রাকের আশপাশে থাকলে সাবধানে চালান। সঠিক লেনে থাকুন এবং রাত্রিকালীন ড্রাইভিং এড়িয়ে চলুন। রাস্তার পাশে নয়, অফিশিয়াল গ্যাস স্টেশন থেকে জ্বালানি নিন। পুলিশ কাগজপত্র চাইলে তাদের সঙ্গে শান্ত ও ভদ্রভাবে কথা বলুন। বৈধ লাইসেন্স না থাকলে জরিমানা হতে পারে।
ট্রাফিক আইন মেনে চলুন
ভিয়েতনামে হেলমেট পরা বাধ্যতামূলক। তাই সব সময় ভালো মানের হেলমেট ব্যবহার করুন। গতি সীমা মেনে মোটরবাইক রাস্তার ডান পাশে চালতে হবে। শহরে বাইকের গতি প্রতি ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার আর গ্রামীণ রাস্তায় ৬০ থেকে ৮০ কিমি/ঘণ্টা। লাল বাতি অমান্য করা, রেস্ট্রিকটেড লেনে ঢোকা, হঠাৎ মোড় নেওয়া—এই ধরনের কাজ করা এড়িয়ে চলুন। অনেক সময় ভিয়েতনামী চালকেরা হাতের ইশারা দিয়ে সিগন্যাল দেন। এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
জরুরি পরিস্থিতিতে করণীয়
বাইক নষ্ট হলে কাছের ওয়ার্কশপে যান অথবা রেন্টাল কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করুন। দুর্ঘটনা ঘটলে মাথা ঠান্ডা রাখুন, ঘটনাস্থলের ছবি তুলুন। ১১৩ (পুলিশ) বা ১১৫ (অ্যাম্বুলেন্স) নম্বরে ফোন করুন।
পরামর্শ
যাত্রা শুরুর আগে বাইক রিফুয়েল করুন। কারণ, গ্রামীণ বা পাহাড়ি এলাকায় পেট্রলপাম্প দুর্লভ হতে পারে।
নিষিদ্ধ এলাকায় বাইক চালানো এড়িয়ে চলুন। কারণ, বড় শহরের কিছু রাস্তায় কেবল গাড়ি চলাচলের অনুমতি আছে।
আবহাওয়ার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। মে-অক্টোবর পর্যন্ত বৃষ্টি বেশি হয়। সে ক্ষেত্রে ভেজা রাস্তায় সাবধানে বাইক চালান।
ব্যক্তিগত জিনিসপত্র নিরাপদে রাখুন। যেমন ফ্রন্ট বাস্কেটে মোবাইল বা ব্যাগ রাখবেন না, চুরি হতে পারে।
সূত্র: ভিএনএক্সপ্রেস