প্রাইম ডেস্ক »
পুঁজিবাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর্পোরেট করহার ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন। সেইসঙ্গে মার্চেন্ট ব্যাংকের কর্পোরেট করহার ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে প্রাক বাজেট আলোচনায় মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা এই প্রস্তাব করেন।
এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ে আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংস্থাটির সদস্য (কাস্টম নীতি) মো. মাসুদ সাদিক। এসময় ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান, মহাসচিব মো. রিয়াদ মতিনসহ উভয় প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এসময় তারা বলেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার কমানো হলেও সরকারের মোট কর আদায় কমবে না বরং বাড়বে। কেননা, বর্তমানে বহু প্রতিষ্ঠান আছে অনেক ভালো ব্যবসা করছে। শিল্পকারখানা আছে তালিকাভুক্ত না হয়ে বিভিন্নরূপ সুবিধা ভোগ করছে কর/ভ্যাট কম দিচ্ছে। পুঁজিবাজারের গতিশীলতা ও রাজস্ব বেশী পরিমানে আদায়ের লক্ষ্যে তালিকাভূক্ত কোম্পানীর কর হার কমিয়ে ১৫ শতাংশে আনতে পারলে এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলি তালিকাভুক্ত করা যাবে, যার ফলশ্রুতিতে সরকারের রাজস্ব বৃদ্বি পাবে বলে আমরা মনে করি।
তারা বলেন, পুঁজিবাজার নিয়ে আলোচনা আসলে প্রথমেই আসে ভাল কোম্পানির শেয়ারের অভাব। এ বিষয়টি অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কেননা দেশে রেজিস্ট্রার্ড কোম্পানির সংখ্যা দেড় লাখের বেশি হলেও স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা মাত্র ৩৪৮টি যা অত্যন্ত নগণ্য। বাস্তবতা হলো ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান সমূহ শুধুমাত্র আইনগত বাধ্যবাধকতার জন্য তালিকাভুক্তিতে আসে, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান সহজভাবে ব্যাংক ঋণ পেয়ে যায় বলে ৭.৫শতাংশ কর সুবিধা তাদের কাছে বেশী গুরুত্ব পায় না এবং পুঁজিবাজারর তালিকাভুক্তির বিষয় বিবেচনা করে না। একটি প্রতিষ্ঠান স্টক এক্সচেঞ্জ এ তালিকাভুক্ত হলে বিভিন্ন প্রকার আইনী কাঠামো পরিপালন করতে বাধ্য হয় এবং ব্যবসার সঠিক তথ্যাদি উপস্থাপন করতে হয় যেহেতু তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য লভ্যাংশ ঘোষণার একটি বাধ্যবাধকতা আছে। ফলে করহার কমানো হলে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা অনেক বাড়বে। এতে রাজস্ব আদায়ে বাড়বে।
উল্লেখ, বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর্পোরেট কর হার ২২ দশমিক ৫ শতাংশ। আর তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির কর হার ৩০ শতাংশ। তবে ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, টেলিকম ও তামাকজাত কোম্পানির কর হার এর বাইরে বিশেষভাবে নির্ধারিত।
মার্চেন্ট ব্যাংকের কর্পোরেট করহার ২৫ শতাংশ করার পেছনে যুক্তি হিসেবে তারা বলেন, বর্তমানে মার্চেন্ট ব্যাংক সমুহ বৃহৎ কর অঞ্চলে আওতাধীন রাখা হয়েছে এবং তার কর হার ৩৭.৫ % যা হতাশাজনক। দেশে বর্তমানে ৬৬টি মার্চেন্ট ব্যাংক কর্মরত আছে। পুঁজিবাজারের ধীর গতি, করোনাকালীন সময়ে ব্যবসা করতে না পারায় বেশির ভাগ মার্চেন্ট ব্যাংকের অপারেটিং খরচ চালানোই সম্ভব হচ্ছে না। এই অবস্থায়, মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে বৃহৎ কর অঞ্চলের বাইরে এনে ২৫ শতাংশ, করহার ধার্য করার সুপারিশ করা হয়েছে।
দ্বৈত কর নীতি এড়াতে অগ্রিম করকে চূড়ান্ত কর হিসেবে বিবেচনা করার প্রস্তাব দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। একইসঙ্গে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ভ্যাট হার কমিয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এছাড়া, বিনা প্রশ্নে পুঁজিবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এই প্রসঙ্গে তারা বলেছেন, এই সুযোগ অব্যাহত রাখলে পুঁজিবাজার যেমন শক্তিশালী হবে, তেমনি সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। পাশাপাশি অর্থপাচারও কমবে। এজন্য আগামী অর্থবছরে ৫ শতাংশ কর দিয়ে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ চান তারা।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে ১০ শতাংশ কর পরিশোধ করে অপ্রদর্শিত অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা যায়। আগামী ৩০ জুন এ সুবিধার মেয়াদ শেষ হবে। পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা এ সুবিধা কমপক্ষে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন।