শনিবার, ডিসেম্বর ৭, ২০২৪
spot_img
Homeমুল পাতাবিজেপি ও আম আদমির জয়জয়কার, ডুবল কংগ্রেস

বিজেপি ও আম আদমির জয়জয়কার, ডুবল কংগ্রেস

প্রাইম ডেস্ক »

ভারতের পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে আবারও বাজিমাত করল বিজেপি। পাঞ্জাবে চমক দেখিয়েছে আম আদমি পার্টি। আর ভরাডুবি হয়েছে কংগ্রেসের।

উত্তর প্রদেশসহ ৪ রাজ্যে গেরুয়া ঝড়

ভোটের আগেও অনেকের ধারণা ছিল, করোনা মহামারি, কৃষক আন্দোলন, বেকারত্ব সমস্যা প্রভৃতি কারনে উত্তর প্রদেশে ভরাডুবি হব ক্ষমতাসীন বিজেপিকে। কিন্তু ভোটগণনা শেষে দেখা গেল, সেসব ধারণাই অমূলক। পাঞ্জাব ছাড়া বাকি চার রাজ্যেই দেখা গেছে গেরুয়া ঝড়।

উত্তর প্রদেশের ইতিহাসে গোবিন্দবল্লভ পন্থ ও সম্পূর্ণানন্দর পর তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে পরপর দুবার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার গৌরব অর্জন করছেন যোগী আদিত্যনাথ।

উত্তরপ্রদেশ ছাড়াও উত্তরাখণ্ডেও জিতছে বিজেপি। উত্তরাখণ্ডে কংগ্রেসকে বহু পেছনে ফেলে এগিয়ে চলেছে বিজেপি। রাজ্যটিতে বিধানসভার আসন আছে ৭০টি, এর মধ্যে ৪৪টিতে এগিয়ে আছে বিজেপি। কংগ্রেস এগিয়ে আছে ২১টিতে এবং আম আদমি পার্টি এগিয়ে রয়েছে একটি আসনে।

মণিপুরেও জয়ের দেখা পেয়েছে বিজেপি। রাজ্যটির বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী এন বিরেন সিংহ জিতলেন ১৮ হাজারের বেশি ভোটে।

অন্যদিকে গোয়াতে প্রথমে কংগ্রেস প্রথমে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চালাও পরে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে গেছে বিজেপি। গোয়ায় বিধানসভার আসন ৪০টি, এর মধ্যে ২০টিতে চালকের আসনে রয়েছে বিজেপি। আর কংগ্রেস এগিয়ে রয়েছে ১২ আসনে।

পাঞ্জাবে আম আদমির জয়জয়কার

দিল্লির বাইরে প্রতিবেশী রাজ্যে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে পেরেছে আম আদমি পার্টি। পাঞ্জাবে সরকার গঠন করতে চলেছে দলটি।

আম আদমি পার্টির এই সাফল্যকে জাতীয় স্তরে কেজরিওয়াল মডেলের প্রতিষ্ঠা হিসাবেই দেখছেন দলের প্রথম সারির নেতা মণীশ সিসোদিয়া।

এদিন আম আদমি পার্টির এই জয় প্রসঙ্গে আপ নেতা মনীশ সিসোদিয়া জানান, ‘কেজরিওয়াল মডেলকে সুযোগ দিয়েছে পাঞ্জাব। আজ জাতীয় স্তরে তার এই মডেল প্রতিষ্ঠিত হলো। এটা সাধারণ মানুষের জয়।’

তিনি আরও জানান, ‘আমরা গোয়া, উত্তরাখণ্ড ও উত্তর প্রদেশেও প্রার্থী দিয়েছিলাম। কিন্তু এবারে আমাদের লক্ষ্য ছিল পাঞ্জাব। ধীরে ধীরে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিও আমাদের দলকে বিশ্বাস করবে।’

পাঞ্জাবের ধুরি আসনে ৫৮ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে জিতে রাজ্যটির পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন ভগবন্ত মান। এই খুশির আবহে মান জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি শপথবাক্য পাঠ করবেন না রাজভবনে। বরং তিনি শপথবাক্য পাঠ করবেন ভগত সিংয়ের গ্রাম খতকরকলানে।

উল্লেখ্য, রাজনীতিতে আসার পর থেকেই মান দাবি করে এসেছেন যে তিনি ভগত সিংয়ের অনুগামী। বিপ্লবের প্রতীক হিসেবেই সবসময় তিনি হলুদ পাগড়ি পরেন।

ইতিমধ্যে আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল দেখা করেছেন পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ভদবন্ত মানের সঙ্গে। আপের এই বিপুল জয়ে পাঞ্জাবের মানুষকে অভিনন্দন জানিয়েছেন কেজরিওয়াল।

উল্লেখ্য, এবারে পাঞ্জাবে কংগ্রেস, বিজেপি ও অকালি দলকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে বেশি আসন নিয়ে ক্ষমতায় আসতে চলেছে আম আদমি পার্টি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পাঞ্জাবে ৯০টি আসনে এগিয়ে রয়েছে আপ। ইতিমধ্যে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, সেখানে আপই ক্ষমতায় আসছে।

পাশাপাশি গোয়াতে আপ সেই অর্থে বেশি আসনে না জিতলেও সেখানে খাতা খুলেছে। গোয়ায় আপ ২টি আসনে এগিয়ে আছে বলে খবর। অর্থাৎ আপ এখন শুধু দিল্লির গণ্ডির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এই দলটির অস্তিত্ব পাঞ্জাব, গোয়াতেও ছড়িয়ে পড়েছে।

ডুবল কংগ্রেস

এবার অন্তত কংগ্রেস ঘুরে দাঁড়াবে—এমনটাই আশা করেছিলেন কর্মী-সমর্থকরা। কিন্তু পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনের ফলাফল দেখে সবাই হতাশ।

বিজেপিকে সমানে সমানে টক্কর দেওয়া তো দূরের কথা, অস্তিত্ব সংকটেই পড়ে গেল দলটি। নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর দেখা যায় কোথাও সেভাবে দাগ কাটতে পারেনি কংগ্রেস। আগের চেয়ে আরও অন্ধকারে ডুবছে ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন দল।

উত্তরপ্রদেশসহ চার রাজ্যে ঝাণ্ডা উড়িয়েছে বিজেপি। দিল্লির গণ্ডি ছাড়িয়ে এই প্রথম বাইরের রাজ্যে (পাঞ্জাবে) বিজয়নিশান উড়িয়েছে আম আদমি পার্টি। কিন্তু কংগ্রেসের উল্টোযাত্রা যেন থামছেই না।

উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, মণিপুর, পাঞ্জাব, গোয়া—কোথাও দাগ কাটতে পারেনি কংগ্রেস। বরং সেখানে ভাল জায়গায় পৌঁছে গেছে আম আদমি পার্টি।

২০১৪ সাল থেকে যেভাবে একের পর এক নির্বাচনে কংগ্রেস ধরাশায়ী হচ্ছে, সেই ধারা অব্যাহত রইল ২০২২ সালের পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনেও। পাঁচ রাজ্যের মধ্যে যে রাজ্যে কংগ্রেস ক্ষমতায় ছিল, সেই পাঞ্জাবেও কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল।

উল্লেখ্য, উত্তরপ্রদেশে বাজিমাত করতে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে আঁকড়ে ধরেছিল কংগ্রেস। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। ইতিহাসে প্রথমবার কংগ্রেসের ভোট নেমে আসছে ২৫ শতাংশের নিচে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আর নেতৃত্বের অযোগ্যতায় উত্তরাখণ্ডেও বিজেপিকে টলাতে পারেননি না হরিশ রাওয়াতরা।

গোয়ায় চিদম্বরমের কাঁধে ভর করে এই বছর লড়াই করলেও বড় ফ্যাক্টর হতে পারেনি। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনেকদিন আগে থেকেই বলে আসছিলেন, যেখানে বিজেপির সঙ্গে সরাসরি লড়াই কংগ্রেসের, সেখানেই জিতছে বিজেপি। তৃণমূল নেতার সেই তত্ত্ব এদিনের ফলাফলে প্রতিষ্ঠিত হলো।

বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রশ্ন উঠেছিল, উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন? উত্তরে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেছিলেন, ‘কংগ্রেসের পোস্টারে আর কোনো নেতার ছবি দেখা যাচ্ছে কি? উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রীর মুখ আমিই!’

২০১৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে জোট করেছিল কংগ্রেস। তখন রাহুল গান্ধীকে সামনে রেখেই লড়েছিল কংগ্রেস। পেয়েছিল সাতটি আসন। প্রিয়াঙ্কা পরে অবশ্য বলেছিলেন, জোট বাঁধা ভুল হয়েছে। সেই ভুলের পাঁচ বছর পর এবার তাঁকে সামনে রেখে উত্তরপ্রদেশে একা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করল কংগ্রেস। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হলো না।

এই ভরাডুবির পর প্রিয়াঙ্কার কোনো প্রতিক্রিয়া মেলেনি। উত্তরপ্রদেশের পাশাপাশি মণিপুরেও সরকার গঠনের পথেই বিজেপি। শুরুতে কিছুটা লড়াই দেওয়ার পর সেখানেও পিছিয়ে পড়ে কংগ্রেস ব্রিগেড। মাত্র ৯টি আসনে এগিয়ে থাকতে দেখা যায় তাদের।

গোয়াতেও বিজেপির কাছে হার মেনেছে কংগ্রেস। তাদের হেভিওয়েট নেতা হরিশ রাওয়াত, যশপাল আরিয়া, তিলক রাজ বেহার সবাই-ই বিজেপি প্রার্থীদের কাছে পিছিয়ে পড়েন।

এমনকি পাঞ্জাবেও পর্যুদস্ত হয়েছে কংগ্রেস। সেখানে মাত্র ১৭টি আসনে এগিয়ে দলটি। সুতরাং, কোথাওই কংগ্রেস আজ প্রাসঙ্গিক নয়। অস্তিত্ব সংকটেই পড়ে গেল সোনিয়া গান্ধীর দল।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

পাঠক প্রিয়