প্রাইম ডেস্ক »
প্রথম টেস্টে লজ্জাজনক হারের দুঃস্মৃতিকে পেছনে ফেলে, আগামীকাল (শুক্রবার) পোর্ট এলিজাবেথে দুই ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে স্বাগতিক বাংলাদেশ। টেস্টটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায়।
ডারবান টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে ৫৩ রানে গুটিয়ে যাবার পর ২২০ রানে ম্যাচ হারের ক্তি স্বাদ পায় বাংলাদেশ। ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৪৩ রানে অলআউট হবার পর টেস্টে এটিই টাইগারদের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন রান।
বছরের শুরুতে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট ম্যাচ জয়, দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এবারের সফরের শুরুতে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জয়ের পর টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচের আগে আত্মবিশ^াসী ছিল বাংলাদেশ শিবির।
কিন্তু শেষ টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে বাজেভাবে অলআউট হবার পরও, হাল ছাড়তে রাজি নয় বাংলাদেশ। কেননা কিছু বিষয় পক্ষে থাকলে ম্যাচটি জিততে পারতো বাংলাদেশ। আসলে চতুর্থ দিনের শেষ আধা ঘন্টার আগ পর্যন্ত স্বাগতিকদের সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেছিলো বাংলাদেশ।
স্পিন অ্যাটাক দিয়ে বাংলাদেশকে ঘায়েল করে দক্ষিণ আফ্রিকা। যা প্রোটিয়াদের মত পেস নির্ভর দেশের খুবই বিরল। যদিও নিজেদের প্রথম সারির পেস আক্রমনকে পায়নি দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু কেউই ভাবেনি, দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনার- সাইমন হার্মার এবং কেশব মহারাজ বাংলাদেশের জন্য দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে।
বাংলাদেশের জন্য এমন হার এতটাই হতাশাজনক যে, অধিনায়ক মোমিনুল হক বলেছেন- বিদেশের মাটিতে স্পিনারদের উইকেট দেয়া একটি অপরাধ।
২০১৫ সালের পর প্রথম টেস্ট খেলতে নামা হার্মার ও মহারাজ দু’জনে মিলে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের ১৪টি উইকেট শিকার করেন। ঘরের মাঠে টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনারদের মধ্যে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এবং পুনরায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার পর সর্বোচ্চ শিকার।
চতুর্থ ইনিংসে বাংলাদেশের পারফরমেন্স এতটাই হতাশাজনক ছিল, পেসারদের দুর্দান্ত পারফরমেন্সকে ঢেঁকে দিয়েছে। চতুর্থবারের মত বিদেশের মাটিতে এবং শেষ তিন টেস্টে দ্বিতীয়বারের মত প্রতিপক্ষের ২০ উইকেট নিয়েছে বাংলাদেশ। যেখানে ম্যাচে পেসারদের শিকার ছিল ১০এর বেশি উইকেট ।
বাংলাদেশের ত্রয়ী পেস আক্রমনে ছিলেন খালেদ আহমেদ-এবাদত হোসেন এবং তাসকিন আহমেদ। এরমধ্যে ইনজুরি নিয়ে খেলেছেন তাসকিন। বল হাতে দারুন পারফরমেন্সে দক্ষিণ আফ্রিকার পেসারদের চেয়ে ভালো করেছেন তিনি।
বাংলাদেশের পেস বোলিং কোচ দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক পেসার অ্যালান ডোনাল্ড। নিজের প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট হিসাবে নিজ দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টাইগারদের পেসারদের নিয়ে কাজ করছেন তিনি।
ডোনাল্ড জানান, পেসাররা যদি এই পারফরমেন্স অব্যাহত রাখতে পারে, তবে পোর্ট এলিজাবেথে দ্বিতীয় টেস্টে দুর্দান্ত কিছু করার ভালো সুযোগ থাকবে। এই উইকেট পেসারদের সুযোগ আসবে , তবে ডারবানের মত নয়।
পোর্ট এলিজাবেথে বাংলাদেশের প্রথম অনুশীলন সেশনে ডোনাল্ড বলেন, ‘আমি মনে করি প্রখম টেস্টে বাংলাদেশী পেসারদের পারফরমেন্স নিয়ে গর্ব করা যায়। এমন পারফরমেন্সই আশা করেছিলাম। আমরা এখানে মানিয়ে নিতে পেরেছি, এটা খুব ভালো ছিল। আমরা পার্টনারশিপে বোলিং নিয়ে কথা বলেছি। সব পেস বোলারই ভাল পারফরমেন্স করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দ্বিতীয় ইনিংসে এটি আরও ভাল ছিল। আমার মনে হয়েছে-আমরা একটি টেস্ট ইউনিটের মতো বোলিং করেছি। রান রেট ৩ দশমিক ৭ থেকে ২ দশমিক ৫-এ নেমে এসেছিলো। যেভাবে আমরা দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২৭৩ রানের মধ্যে আটকাতে পেরেছিলাম এবং দ্বিতীয় ইনিংসে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট নিয়েছিলাম। আমি পেসারদের নিয়ে খুব গর্বিত। তারা সারা দিন প্রতিপক্ষের উপর চাপ অব্যাহত রাখতে পেরেছে। আপনি যদি সাফল্যের জন্য একটি পদ্ধতি চান, তবে সেন্ট জর্জ পার্কে এটি পরিবর্তন করা যাবে না।’
কাঁধের ইনুজরির কারণে দ্বিতীয় টেস্ট থেকে ছিটকে যাওয়ায়, ইতোমধ্যেই দেশে ফিরেছেন তাসকিন আহমেদ। তাই তাসকিনকে ছাড়াই মাঠে নামতে হবে তাসকিনকে।
ব্যাট হাতে দুই ইনিংসেই ডাবল ফিগারে পৌঁছাতে না পারায়, পরের টেস্ট থেকে বাদ পড়া প্রায় নিশ্চিত ওপেনার সাদমান ইসলামের। হঠাৎ পেট খারাপের কারণে প্রথম টেস্টে খেলতে পারেননি তামিম ইকবাল। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে ফিরছেন তিনি। ডারবানে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে টেস্ট সেঞ্চুরি করা ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়ের সাথে ইনিংস শুরু করবেন তামিম।
বাংলাদেশ দল : মোমিনুল হক (অধিনায়ক), আবু জায়েদ, এবাদত হোসেন, খালেদ আহমেদ, লিটন দাস (উইকেটরক্ষক), মাহমুদুল হাসান জয়, মেহেদি হাসান মিরাজ, মুশফিকুর রহিম, নাজমুল হোসেন শান্ত, নুরুল হাসান, সাদমান ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, তাইজুল ইসলাম, তামিম ইকবাল ও ইয়াসির আলি।
দক্ষিণ আফ্রিকা দল : ডিন এলগার (অধিনায়ক), তেম্বা বাভুমা, ড্যারিন ডুপাভিলন, সারেল এরউই, সাইমন হার্মার, কেশব মহারাজ, উইয়ান মুলডার, ডুয়েন অলিভিয়ার, কিগান পিটারসেন, রায়ান রিকেল্টন, লুথো সিপামলা, গ্লেণটন স্টুরম্যান, কাইল ভেরিনি (উইকেটরক্ষক), লিজাড উইলিয়ামস ও কায়া জন্ডো।