প্রাইম ডেস্ক »
চট্টগ্রাম পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ‘দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার’ মো. নুরনবী ম্যাক্সন ভারতে গ্রেফতার হয়েছেন। গত শুক্রবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর চব্বিশ পরগণার বারানগর থানার ডানলপ এলাকা থেকে দেশটির পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
ঐ এলাকায় তমাল চৌধুরী নামে বসবাস করে আসছিলেন শীর্ষ এই সন্ত্রাসী। ম্যাক্সন চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ বোস্তামি থানার জাহানপুর এলাকার আব্দুল লতিফের ছেলে। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
২০১৭ সালের ৩১ আগস্ট জামিনে বের হয়ে কাতার চলে যান ম্যাক্সন ও আরেক দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সারোয়ার। চট্টগ্রামের অপরাধ জগতে তারা মানিকজোড় হিসেবে পরিচিত। কাতারে বসে অনুসারীদের মাধ্যমে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করতেন তারা। ২০২০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কাতার থেকে দেশে ফিরে আসলে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার হন সারোয়ার।
ম্যাক্সনের ব্যাপারে জানতে চাইলে নগরের বায়েজিদ বোস্তামি থানার ওসি মো. কামরুজ্জামান বলেন, ম্যাক্সনকে ভারতে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে পুলিশ সদর দফতরে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০১১ সালের ৬ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে নুরনবী ওরফে ম্যাক্সন ও চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকা থেকে সারোয়ার ও গিট্টু মানিককে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় একে-৪৭ রাইফেল ও গুলি। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শিবির ‘ক্যাডার’ সাজ্জাদ হোসেন খানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে একসময় পরিচিত ছিলেন সারোয়ার ও ম্যাক্সন। পরে তাদের সম্পর্কের অবনতি হলে কারাগারে থাকা শিবিরের আরেক সন্ত্রাসী নাছিরের অনুসারী হয়ে ওঠেন তারা।
২০১৩ সালে কারাগারে থাকা অবস্থায় সাজ্জাদের সঙ্গে সারোয়ার ও ম্যাক্সনের দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে উঠলে নাছিরকে চট্টগ্রাম থেকে কাশিমপুর কারাগারে এবং সারোয়ার, ম্যাক্সনকে চট্টগ্রাম কারাগারের আলাদা ওয়ার্ডে রাখা হয়। প্রায় ছয় বছর কারাগারে থাকার সময়ও সারোয়ার ও ম্যাক্সন তাদের অনুসারীদের দিয়ে বায়েজিদ এলাকায় চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ করতেন।
২০১৭ সালে জামিনে কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে কাতারে চলে যান সারোয়ার ও ম্যাক্সন। আর চট্টগ্রামের স্কুল ছাত্রী তাসফিয়া হত্যা মামলায় আসামি হওয়ার পর ইমতিয়াজ সুলতান ওরফে একরামও কাতারে পাড়ি জমান। ২০১৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে এক গাড়ির যন্ত্রাংশ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ফোনে চাঁদা দাবি করে সারোয়ার, ম্যাক্সন ও একরাম। তাদের হয়ে চাঁদাবাজির কাজটা করত তার অনুসারীরা। তাদের কথামতো চাঁদা না দেওয়ায় একই বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর বায়েজিদের নয়া হাটে ঐ ব্যবসায়ীর বাড়িতে পেট্রল বোমা ছোড়া হয়।
ঐ ব্যবসায়ী থানায় কোনো অভিযোগ না করলেও পুলিশ এর তদন্ত শুরু করে। একই সময়ে উজ্জ্বল দেওয়ানজী নামে আরেক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে শিবির ক্যাডার সাজ্জাদের নামে চাঁদা দাবি করা হয়। পুলিশ তদন্তে নেমে দেখেন, কাতারে থাকা সারোয়ার, ম্যাক্সন ও একরামের নির্দেশে উজ্জ্বলের কাছে চাঁদা চেয়েছিল তার অনুসারীরা। ২০১৯ বছরের ২৪ অক্টোবর অভিযান চালিয়ে সারোয়ার-ম্যাক্সনের অনুসারী পাঁচ যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে দেশে ফিরে এসে গ্রেফতার হন সারোয়ার। সেখান থেকে ভারতে পাড়ি জমান ম্যাক্সন।