প্রাইম ডেস্ক »
মাত্র ৪৫ রানেই যখন ৬ উইকেট পড়ে গিয়েছিল, কেউ কি ভেবেছিলেন এই ম্যাচটা বাংলাদেশ জিতবে? তখনও যে জয় থেকে ১৭১ রান দূরে টাইগাররা। ক্রিজে ছিলেন সর্বশেষ স্বীকৃত দুই ব্যাটার। তবে ঘুরে দাঁড়ানোর অবিশ্বাস্য গল্প লিখে এই ম্যাচটি জিতেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
আফগানিস্তানের দেওয়া ২১৬ রানের লক্ষ্য ৪ উইকেট হাতে রেখে পেরিয়ে গেছে বাংলাদেশ। হাতে ছিল আরো ৭ বল। আফিফ হোসেন ধ্রুব ও মেহেদি মিরাজের অনবদ্য দুই ইনিংসে ভর করে সাগরিকায় ইতিহাস লিখেছে টাইগাররা।
অবশ্য রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটাও ছিল দারুণ। প্রথম ওভারেই আসে ১২ রান। তবে তৃতীয় ওভারে খারাপ সময়ের শুরু। মাত্র ৩ বলের ব্যবধানে দুই ওপেনারকে সাজঘরে ফেরান ফজল হক ফারুকি। তামিম ৮ ও লিটন ১ রান করেন।
নিজের পরের ওভারে ফারুকি ফেরেন আরো ভয়ংকর রূপে। এবারো তিনি নেন ২ উইকেট। ৩ রান করা মুশফিকুর রহিমকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলার পর অভিষিক্ত ইয়াসির আলি রাব্বিকে রানের খাতাই খুলতে দেননি এই পেসার। করেন সরাসরি বোল্ড।
সাকিব ১০ ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৮ রানে ফিরলে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডের অবস্থা দাঁড়ায় ৬ উইকেটে ৪৫ রান। এমতাবস্থায় বড় ব্যবধানে হারের প্রমাদ গুনছিলেন টাইগার সমর্থকরা। তবে তা আর হতে দেননি আফিফ হোসেন ও মেহেদি হাসান মিরাজ।
ইনিংসের বাকি সময়ে দুজনের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ধংসস্তুপের মধ্য থেকে ফিনিক্স পাখির মতো জেগে ওঠে বাংলাদেশ। দলকে জয় এনে দেওয়ার পথে আফিফ তুলে নিয়েছেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি। তার সঙ্গী মিরাজ পেয়েছেন দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরির স্বাদ।
ম্যাচের শেষ পর্যন্ত আফিফ ও মিরাজ যথাক্রমে ৯৩ ও ৮১ রানে অপরাজিত থাকেন। অবিশ্বাস্য জয়ের পথে তারা গড়েন সপ্তম থেকে দশম উইকেটের মাঝে দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ রানের জুটি। দুজনে গড়েন ১৭৪ রানের অবিচ্ছেদ্য পার্টনারশিপ।
এর আগে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন আফগান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শাহিদী। আফগানিস্তানের হয়ে ইনিংস উদ্বোধনে নামেন রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান। ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই আসে সাফল্য।
মুস্তাফিজুর রহমানকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে তামিম ইকবালের তালুবন্দী হন গুরবাজ। এর আগে তিনি করেন ৭ রান। এরপর রহমত শাহ ও ইব্রাহিম দুজন মিলে দলকে ধীরে ধীরে এগিয়ে নিতে থাকেন। দুজনে গড়েন ৪৫ রানের জুটি। ১৯ রান করা ইব্রাহিমকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন শরিফুল ইসলাম।
রহমত শাহ ৩৪ ও শাহিদী ২৮ রানে আউট হলে ১০২ রানেই ৪ উইকেট হারায় আফগানরা। এমন সময় আফগানদের অল্পেই অল আউট হওয়ার হাত থেকে বাঁচান নাজিবুল্লাহ জাদরান ও মোহাম্মদ নবী। নাজিব ও নবীর ৬৩ রানের জুটিতে ম্যাচে ফেরে আফগানিস্তান। নবী আউট হন ২০ রানে।
এরপর একই ওভারে গুলবাদিন নাইব ও রশিদ খানকে সাজঘরে ফেরান সাকিব আল হাসান। নাইব ১৭ রান করলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি রশিদ। পরের ওভারে মুজিব উর রহমানকে আউট করেন মুস্তাফিজুর রহমান। এর মাঝে একপ্রান্ত আগলে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন নাজিবুল্লাহ। নবম উইকেট হিসেবে আউট হওয়ার আগে এই ব্যাটার খেলেন ৮৪ বলে ৬৭ রানের ইনিংস।
নিজের শেষ ওভারের প্রথম ডেলিভারিতেই আহমাদজাইকে আউট করেন মুস্তাফিজ। এর মাধ্যমে শেষ হয় আফগানদের ইনিংস। ৪৯.১ ওভারে ২১৫ রানে অল আউট হয় আফগানিস্তান। বাংলাদেশের হয়ে মুস্তাফিজ তিনটি এবং তাসকিন, শরিফুল ও সাকিব দুটি উইকেট নেন। বাকী উইকেটটি শিকার করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।