প্রাইম ভিশন ডেস্ক »
চট্টগ্রাম বন্দরে ভারী গাড়ি প্রবেশের ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে কনটেইনার পরিবহনের ট্রেইলার, কাভার্ড ভ্যানসহ সব ধরনের পরিবহন চলাচল বন্ধ রেখেছেন চালক ও মালিকরা। সম্প্রতি ৫৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৩০ টাকা ট্যারিফ নির্ধারণ করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক)। ব্যক্তি মালিকানার এসব ট্রেইলার আন্তজেলা রুটে কনটেইনার পরিবহন করে। এই বাড়তি মাশুল শ্রমিকরা দেবে নাকি মালিকরা দেবে সে সিদ্ধান্ত হয়নি। তাই তারা ট্রেইলার চালানো বন্ধ রেখেছেন। গত ১৫ অক্টোবর থেকে বন্দরে নতুন মাশুল কার্যকর হওয়ার পর এ অচলাবস্থা দেখা দেয়। ফলে কিছু কিছু প্রাইম মুভার ও ট্রাক বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন বন্ধ করে দেয়। তবে বিভিন্ন ডিপো বা অফডকের ট্রেইলার চলছে।
আন্তজেলা মালামাল পরিবহন সংস্থা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, পরিবহন ব্যবসায়ীদের ওপর জোর করে ফি চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। চবকের এই সিদ্ধান্ত এক প্রকার খামখেয়ালি কর্মকাণ্ড ছাড়া আর কিছুই না। বন্দরের ৮৫ শতাংশ পণ্য পরিবহন তারা করেন উল্লেখ করে বলা হয়, বন্দরের প্রবেশ ফি বাড়ানোর/নির্ধারণ করার আগে কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে নির্ধারণ করা। বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের সঙ্গে পরামর্শ না করে কার কথায় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে তা তাদের বোধগম্য হচ্ছে না। বন্দরের এ রকম খামখেয়ালি কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে আগেও তারা প্রতিবাদ জানান। বন্দরের এই সিদ্ধান্ত দ্রুত বাতিল করে আগের মতো গেট পাস ফি না নেওয়ার অনুরোধ রাখেনি কর্তৃপক্ষ। সে জন্য আগেও কয়েকটি সংগঠন তাদের সদস্যদের গাড়ি বন্দরে প্রবেশে বিরত রাখেন।
ইসমাইল হোসেন নামের এক চালক বলেন, ‘৪১ বছর ধরে পরিবহন লাইনে আছি। ৫৭ টাকা থেকে ২৩০ টাকা গেট পাস করেছে। আমরা যার কাছ থেকে গেট পাস নিই, তাকেও ৩০ থেকে ৪০ টাকা দিতে হয়। এভাবে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা চলে যায়। মাসে যদি ৭ ট্রিপ দিই তাহলে আমাদের দুই হাজারের বেশি টাকা খরচ হয়ে যায়। এই টাকা আমরা চালকরা দিতে পারব না। আবার মালিকরা বলছেন তারাও দেবেন না। মালিকরা টাকা না দিলে আমরা কীভাবে গাড়ি চালাব?
বাংলাদেশ কাভার্ড ভ্যান ট্রাক প্রাইম মুভার পণ্য পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব চৌধুরী জাফর আহমেদ বলেন, বন্দরে পুরোদমে পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে। কোনো পণ্য পরিবহন হচ্ছে না। আগামীকাল (রবিবার) বেলা ১২টায় বন্দর চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমাদের বৈঠক আছে। এরপর আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।
চট্টগ্রাম প্রাইম মুভার ও ফ্লাটবেড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘কর্মবিরতি বা ধর্মঘট নয়, প্রাইম মুভার মালিকরা ৫৭ টাকার পাস ২৩০ টাকা করায় গাড়ি চালানো বন্ধ রেখেছেন। চট্টগ্রাম থেকে ভারী গাড়ি (প্রাইম মুভার, ট্রেইলার, লং ভেহিক্যাল) যখন ঢাকা বা কোনো গন্তব্যে যায় তখন আমাদের লাইন খরচ (ফি, টোল, বকশিশ) ফিক্সড করা থাকে। তেলের দাম বাড়লে সেটি রিভাইস করা হয়। বিষয়টি নিয়ে আমরা বন্দরের পরিচালক (নিরাপত্তার) সঙ্গে কথা বলেছি। বন্দর চেয়ারম্যান ঢাকা থেকে এলে আবার আলোচনা হবে আশাকরি। ১৪ অক্টোবর রাত থেকেই আমাদের ট্রেইলার চলাচল করছে না।’
বেসরকারি ডিপো মালিকদের সংগঠন বিকডার মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, ‘ডিপোর ট্রেইলারগুলো বন্দর থেকে ডিপোতে কনটেইনার আনা-নেওয়া করে। প্রাইম মুভার মালিকদের ট্রেইলার চলে আন্তজেলা রুটে। প্রাইম মুভার মালিকদের গাড়ি না চালানোর কারণে কিছু কিছু জায়গায় ডিপোর ট্রেইলার চলাচল চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। আমরা এখনো সব ডিপোর ডাটা নিইনি কী পরিমাণ কনটেইনার জমেছে।’
এদিকে প্রাইম মুভার মালিকদের ট্রেইলার চলাচল না করায় উদ্বেগ জানিয়েছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। তাদের আশঙ্কা এভাবে চলতে থাকলে একসময় অচলাবস্থা তৈরি হবে। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সব স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে আলোচনা ও সমন্বয় প্রয়োজন। বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ট্রেইলার মালিকদের ট্রেইলার চলাচলে বিভিন্ন স্থানে বাধা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।