সোমবার, অক্টোবর ২০, ২০২৫
spot_img
Homeসংবাদবিমানবন্দরের আগুনে আমদানি-রপ্তানিতে প্রভাব পড়ার শঙ্কা ব্যবসায়ীদের

বিমানবন্দরের আগুনে আমদানি-রপ্তানিতে প্রভাব পড়ার শঙ্কা ব্যবসায়ীদের

প্রাইম ভিশন ডেস্ক »

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা স্পষ্ট না হলেও এ ঘটনায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের ধারণা- এতে এক বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

ইন্টারন্যাশনাল এয়ার এক্সপ্রেস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট কবীর আহমেদ খান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ‘সরাসরি কী পরিমাণ ক্ষতি হতে পারে, তার হিসাব এখনই জানার সুযোগ নেই। কিন্তু এ কারণে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি আমদানি ও রপ্তানি ইমপ্যাক্টেড হতে পারে।’

একই কথা বলেছেন তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানিকারক ও বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান। তিনি  বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, আর তা হতে পারে এক বিলিয়ন ডলারেরও ওপরে।’

তিনি জানান, এর মধ্যে সরাসরি আর্থিক ক্ষতি ছাড়াও, সময় মতো কাঁচামাল না পাওয়ায় অর্ডার ক্যানসেল, কয়েক গুণ বাড়তি ব্যয়ে এয়ারে পাঠাতে বাধ্য হওয়া, ডিসকাউন্ট, সময় মতো বায়ারের স্যাম্পল না পাওয়ায় অর্ডার কনফার্ম করতে না পারাসহ আরো কিছু ক্ষতি রয়েছে।

উল্লেখ্য, কার্গো ভিলেজের গোডাউনে তৈরি পোশাক ছাড়াও ফার্মাসিউটিক্যাল, কৃষি ও কমার্শিয়াল ইমপোর্টারদের বিভিন্ন কাঁচামাল থাকে।

ফজলে শামীম এহসান বলেন, ‘তৈরি পোশাক খাতের ৫০০ শতাধিক রপ্তানিকারকের ছোট ছোট মালামাল আছে সেখানে। টাকার পরিমাণে কম হলেও এর সঙ্গে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের রপ্তানি জড়িত।’

তিনি বলেন, ‘আমার হয়তো ২ হাজার ডলার মূল্যের ক্ষতি হলো। কিন্তু এর কারণে রপ্তানি আটকে যাবে প্রায় দুই লাখ ডলারের। জরুরি হওয়ার কারণেই আমরা এয়ারে এগুলো আমদানি করি। পুড়ে গেলে আমদানিতে দেরি হবে, যে কারণে হয়তো এয়ারে পাঠাতে হবে। এয়ারে পাঠাতে হলে মোট পণ্যের মূল্যের অর্ধেক চলে যাবে, যা আমাকে বহন করতে হবে। তা না হলে বায়ার হয়তো ৫০ শতাংশ ডিসকাউন্ট চাইবে।

ফলে ছোট ব্যবসায়ীদের পক্ষে এমন লোকসান করার পর আর উঠে দাঁড়ানো সম্ভব হবে না।

তিনি বলেন, অনেক সময় বায়ার একটি স্যাম্পল পাঠালো বাংলাদেশসহ তিন দেশে। সময়মতো এই স্যাম্পল না পাওয়ায় আমরা কাউন্টার স্যাম্পল বায়ারকে পাঠাতে পারবো না। অথচ এই সময়ে হয়তো চীনের রপ্তানিকারক পাঠালো এবং তিনি অর্ডার কনফার্ম করলেন, বাংলাদেশ ওই অর্ডার পেল না।

তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহ-সভাপতি মো. শিহাব উদ্দোজা চৌধুরীও একই কথা বলেন।

ইন্টারন্যাশনাল এয়ার এক্সপ্রেস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এয়ার কার্গোতে থাকা আমদানি ও রপ্তানির মালামালের মধ্যে তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল খাতের মালামাল থাকে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। দেশে বর্তমানে ৬০টির বেশি ইন্টারন্যাশনাল এয়ার কার্গো কুরিয়ার সেবার মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত।

তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা তাদের কী পরিমাণ মালামাল এবং আর্থিক অঙ্কে এর পরিমাণ কত, সেই হিসাব করছেন বলে বিজিএমইএ জানিয়েছে।

সংগঠনটির সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, ‘আমাদের সব মেম্বারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছি, তাদের কী পরিমাণ মালামাল এয়ার কার্গোতে ছিল তা জানানোর জন্য।’

তিনি বলেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনই বলা কঠিন।

অবশ্য মাহমুদ হাসান খানেরও আমদানিকৃত অ্যাক্সেসরিজ ও মেশিনারিজ ছিল এয়ার কার্গোতে। সেগুলো অক্ষত আছে না পুড়ে গেছে, তা শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জানতে পারেননি তিনি।

জেমটেক্স লিঙ্কেজ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমরান আহমেদ বলেন, ‘ভারত থেকে আমার আমদানি করা প্রায় ৪০ কেজি লেইচ (অ্যাক্সেসরিজ) ছিল কার্গো ভিলেজে। আমার সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট জানিয়েছে, ওই মালামাল পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ৯৮ শতাংশ। আমার এই পণ্য ছিল কুরিয়ার সেকশনে এবং প্রথমেই আগুন ধরেছে ওই সেকশনে।’

তিনি বলেন, ‘দ্রুত প্রয়োজন হওয়ায় এয়ারের মাধ্যমে এই অ্যাক্সেসরিজ আমদানি করেছিলাম। যার মাধ্যমে ১.৬২ লাখ ডলারের রপ্তানি হওয়ার কথা। সম্ভবত এই রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ, এর আগে গত ৩০ তারিখে আমার রপ্তানির ডেট ফেইল করেছি।’

গত বছর বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ছিলো প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার।

কার্গো ভিলেজ ব্যবহার করে মূলত হালকা যন্ত্রপাতি ও ইলেকট্রনিক পণ্যের আমদানি এবং তৈরি পোশাক ও নমুনা, অল্প পরিমাণ অ্যাক্সেসরিজ, দলিলপত্র ও পারসেল আমদানি বা রপ্তানি করা হয়ে থাকে।

গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, একটি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি জানান, তাদের ৭৫ হাজার ডলার মূল্যের ওষুষের কেমিক্যাল পুড়ে গেছে।

তিনি বলেছেন, ‘আমি বৃহস্পতিবার চেষ্টা করেছিলাম ওই পণ্য ছাড় করাতে, কিন্তু পারিনি। রোববার ক্লিয়ার করার কথা ছিল, কিন্তু সব পুড়ে গেছে।’

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

পাঠক প্রিয়