মঙ্গলবার, মে ২০, ২০২৫
spot_img
Homeএই মুহুর্তেভারতীয় বিমানের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করল পাকিস্তান

ভারতীয় বিমানের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করল পাকিস্তান

প্রাইম ভিশন ডেস্ক »

ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের পেহেলগামে জঙ্গি হামলার পর— পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর সব পদক্ষেপ নেয় ভারত। এর প্রেক্ষিতে, পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে আটারি-ওয়াঘা সীমান্তপথ বন্ধ, সিমলা চুক্তি স্থগিত, ভারতীয় কূটনীতিকদের বহিষ্কার, আকাশপথ ও বাণিজ্য বন্ধসহ একগুচ্ছ পাল্টা ব্যবস্থা ঘোষণা করেছে।

আজ বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের নেতৃত্বে জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (এনএসসি) এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আলোচনার মূল বিষয় ছিল ‘পেহেলগা্মে ভারতের ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন’- পরবর্তী অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক প্রেক্ষাপট।

দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “২৩ এপ্রিল ভারতের ঘোষিত একতরফা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পদক্ষেপগুলোর আইনি বৈধতা নেই এবং তা দায়িত্বজ্ঞানহীন।”

শিমলা চুক্তি স্থগিত, সীমান্ত বন্ধের ঘোষণা

বৈঠকের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত হলো, ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তি স্থগিত এবং ওয়াঘা সীমান্তপথ বন্ধ ঘোষণা।

বিবৃতিতে বলা হয়, “ভারতের পক্ষ থেকে সন্ত্রাসবাদ উসকে দেওয়া, সীমান্তবর্তী হত্যা এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের প্রবণতা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে সমস্ত দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্থগিত রাখার অধিকার রাখে।”

এছাড়া ৩০ এপ্রিলের মধ্যে বৈধভাবে সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করা যাত্রীদের ফেরত যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সিন্ধু পানিচুক্তি নিয়ে কড়া হুঁশিয়ারি

ভারতের একপাক্ষিকভাবে সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিতের ঘোষণা ঘিরে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পাকিস্তান।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানায়, “এই চুক্তি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও বাধ্যতামূলক, যা একতরফাভাবে বাতিল করার সুযোগ নেই।”

পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি হুঁশিয়ারি দিয়ে জানায়, “পানির প্রবাহ থামানো বা ভিন্নমুখী করা হলে— তা যুদ্ধ ঘোষণার শামিল হবে এবং সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে এর জবাব দেওয়া হবে।”

কূটনৈতিক ও ভিসা সম্পর্ক ছিন্ন

ভারতের মতো পাকিস্তানও সার্ক ভিসা এক্সেমশন স্কিম (এসভিইএস) বাতিল করেছে।

এতে বলা হয়, “এসভিইএস-এর আওতায় থাকা সব ভারতীয় নাগরিক (শিখ তীর্থযাত্রী ছাড়া) ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তান ছাড়তে হবে।”

এছাড়া, ভারতীয় প্রতিরক্ষা, নৌ ও বিমান উপদেষ্টাদের অবিলম্বে পাকিস্তান ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের সহকারী কর্মকর্তাদেরও ফেরত পাঠানো হবে।

৩০ এপ্রিল থেকে ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের সংখ্যা ৩০-এ নামিয়ে আনা হবে।

বাণিজ্য ও বিমান চলাচল বন্ধ

পাকিস্তান ঘোষণা করেছে, ভারতীয় মালিকানাধীন বা পরিচালিত সব এয়ারলাইনের জন্য তাদের আকাশপথ বন্ধ করা হয়েছে।

এছাড়া, ভারতের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা তৃতীয় দেশের মাধ্যমে সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিত করা হয়েছে।

সামরিক প্রস্তুতির বার্তা

শাহবাজ শরীফের কার্যালয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের আগ্রাসনের পর— পাকিস্তান যেভাবে দৃঢ় প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল, এবারও তেমন প্রতিক্রিয়া দেখাতে তার সেনাবাহিনী সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত।”

পাকিস্তান জানিয়ে দেয়, “শান্তিতে বিশ্বাসী হলেও দেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও মর্যাদার প্রশ্নে কোনও আপস করা হবে না।”

ভারতের ঘোষণা ও কূটনৈতিক পদক্ষেপ

এর আগে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সব পাকিস্তানি নাগরিককে ২৯ এপ্রিলের মধ্যে ভারত ছাড়তে হবে।

পাকিস্তান সরকারের আনুস্থানিক ‘এক্স’ (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টও ভারতে ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনায়, পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার সাআদ আহমেদ ওয়ারিচকে ডেকে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়।

ভারতের পক্ষ থেকে সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত, সীমান্ত বন্ধ এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক পর্যায়ক্রমে হ্রাস করাকে— পাকিস্তানের ওপর “সর্বোচ্চ কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ” হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বুধবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। দেশটির পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি জানান, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু পানি চুক্তি আপাতত স্থগিত করা হচ্ছে। এ ব্যবস্থা অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত বহাল থাকবে। এ সিদ্ধান্তের ফলে যে পরিমাণ পানি পাকিস্তানের পাওয়ার কথা, চুক্তি স্থগিত করায় আপাতত তা ব্যাহত হবে।

দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হলো— আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া। বুধবার থেকেই পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের এই গুরুত্বপূর্ণ স্থলসীমান্ত বন্ধ হয়ে গেছে। ওই সীমান্ত দিয়ে যারা ভারতে ঢুকেছেন, তাদের সবাইকে ১ মের মধ্যে ফিরে যেতে বলা হয়েছে।

তৃতীয় সিদ্ধান্ত হলো দিল্লিতে— পাকিস্তানের হাইকমিশনে নিযুক্ত সব সামরিক, নৌ ও বিমান উপদেষ্টাকে বহিষ্কার। তাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে ইসলামাবাদে ভারতের হাই কমিশনে নিযুক্ত ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তাদের ফিরিয়ে আনছে নয়াদিল্লি।

চতুর্থ সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, সীমান্তচৌকি বন্ধ ও দূতাবাসে কর্মীর সংখ্যা কমানোর পাশাপাশি পাকিস্তানিদের ভারতে আসাও সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। সে কারণে সব পাকিস্তানির জন্য সার্ক ভিসা বাতিল করার কথা জানানো হয়েছে। এই ভিসায় যারা ভারতে রয়েছেন, তাদের ফেরত যাওয়ার জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

পঞ্চম সিদ্ধান্তটি হলো, দুই দেশের হাইকমিশনগুলোতে কর্মরত লোকবল সংখ্যা ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০ করা হবে।

পহেলগাঁওয়ে হামলার প্রেক্ষাপট

সম্প্রতি এক জঙ্গি হামলায় ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের পেহেলগামে ২৬ জন নিহত হয়, যা ২০০০ সালের পর অঞ্চলটিতে বেসামরিক মানুষের ওপর সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা।

একটি অজ্ঞাত সংগঠন “দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট” এ হামলার দায় স্বীকার করেছে বলে ভারতীয় গণমাধ্যম দাবি করছে।

ভারত দাবি করছে, হামলায় পাকিস্তানি সন্ত্রাসীরা জড়িত, যদিও এর পক্ষে কোনও প্রমাণ প্রকাশ করেনি। পাকিস্তান এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে নিহতদের জন্য শোক প্রকাশ করেছে।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

পাঠক প্রিয়