রবিবার, অক্টোবর ৫, ২০২৫
spot_img
Homeমুল পাতাতরুণদের মধ্যে বাড়ছে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি, কারণ কী

তরুণদের মধ্যে বাড়ছে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি, কারণ কী

প্রাইম ভিশন ডেস্ক »

একসময় ক্যানসারকে বার্ধক্যজনিত রোগ হিসেবেই দেখা হতো। এখনও এ কথা সত্য যে, ক্যানসারের বেশিরভাগ নতুন রোগী সত্তরোর্ধ্ব। তবে ধীরে ধীরে চিত্র পাল্টাচ্ছে। এখন দেখা যাচ্ছে, নির্দিষ্ট কিছু ধরনের ক্যানসার ক্রমেই তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বাড়ছে।

উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক কোলোরেক্টাল (আন্ত্রিক) ক্যানসার। ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে এ রোগের হার কমলেও, ৫০ বছরের নিচের মানুষের মধ্যে এর বিস্তার দ্রুত বাড়ছে। ১৯৯০ সালে বিশ্বে কোলোরেক্টাল ক্যানসারের রোগী ছিল প্রায় ৯৪ হাজার ৭০০ জন, যা ২০১৯ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ২৫ হাজার ৭৩৬ জনে।

ইউরোপজুড়ে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, ২০০৪ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ২০–২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে এ রোগের হার প্রতিবছর গড়ে ৭.৯ শতাংশ বেড়েছে। একই সময়ে ৩০–৩৯ বছর বয়সীদের মধ্যে এ হার ছিল ৪.৯ শতাংশ এবং ৪০–৪৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ১.৬ শতাংশ। অর্থাৎ, ৫০ বছরের নিচের সব বয়সীদের মধ্যেই কোলোরেক্টাল ক্যানসার বাড়ছে, তবে সবচেয়ে দ্রুত বাড়ছে তরুণদের মধ্যে।

তরুণদের মধ্যে এ রোগের বৃদ্ধি নিয়ে বিজ্ঞানীরা জেনেটিক কারণকে খুব একটা দায়ী করছেন না। বিশেষজ্ঞদের মতে, অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার এ প্রবণতার বড় কারণ। ২০২৫ সালে প্রকাশিত এক সমীক্ষাতেও এ বিষয়টি স্পষ্টভাবে উঠে আসে। এসব খাবারের মধ্যে রয়েছে প্যাকেটজাত স্ন্যাকস, রেডি মিলস, চিনিযুক্ত খাবার, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত মাংস ও বিভিন্ন ফাস্ট ফুড।

ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ার সঙ্গে কোলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকির সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করা হয়। এতে ৪৬ হাজারেরও বেশি পুরুষকে ২৪ থেকে ২৮ বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করা হয়। দেখা যায়, যারা সবচেয়ে বেশি অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার খেয়েছেন, তাদের কোলোরেক্টাল ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় ২৯ শতাংশ বেশি। আশ্চর্যের বিষয় হলো, পুষ্টি ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার পরও একই ফল পাওয়া গেছে। গবেষকদের মতে, কীভাবে এসব খাবার ক্যানসার সৃষ্টি করে, তা জানতে আরও গবেষণা প্রয়োজন।

এখন পর্যন্ত অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবারকে মূলত স্থূলতার সঙ্গে মেলানো হতো, আর অতিরিক্ত ওজন যে ক্যানসারের বড় ঝুঁকি- সেটাও সবার জানা। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, স্বাভাবিক ওজনের মানুষদের মধ্যেও কোলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ছে।

বিজ্ঞানীদের মতে, অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার শরীরে ইনসুলিন সিগন্যালিং প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটায়, দীর্ঘমেয়াদি নিম্নমাত্রার প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম বা জীবাণুসমষ্টির ভারসাম্য নষ্ট করে। এগুলো সবই ক্যানসার বিকাশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। মানুষের খাবার-আচরণই নির্ধারণ করে কোষ কীভাবে বাড়বে, রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা কেমন কাজ করবে এবং অন্ত্রের জীবাণুগুলো কেমন আচরণ করবে।

প্রাণীদেহে পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবারে থাকা ইমালসিফায়ার, কৃত্রিম সংযোজক ও কৃত্রিম সুইটেনার অন্ত্রের প্রদাহ ও টিউমার বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারে। পাশাপাশি এসব খাবারে আঁশ ও উদ্ভিজ্জ ফাইটোকেমিক্যালস থাকে না। ফলে এসব খাবার নিয়মিত খেলে অন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

তামাক যে ফুসফুসের ক্যানসারের কারণ এবং অ্যালকোহল যে স্তন ও লিভারের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়- এ বিষয়গুলো বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পেতে কয়েক দশক সময় লেগেছিল। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আগামী এক দশকের মধ্যেই তরুণদের কোলোরেক্টাল ক্যানসারের অন্যতম কারণ হিসেবে অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবারের বিষয়টি স্বীকৃতি পাবে।

যদি ২০ শতকের ক্যানসারের বড় কারণ হয়ে থাকে ধূমপান, তবে ২১ শতকে সেই জায়গা নিতে পারে অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার। যদিও বিজ্ঞান এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি, তবে প্রতিদিন এর পক্ষে নতুন নতুন প্রমাণ যুক্ত হচ্ছে। প্রচলিত কথা আছে- খাবারই ওষুধ। আর এখন বিজ্ঞান বলছে- খাবারই প্রতিরোধ।

তবে আশার খবর হলো, ২০২৫ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত দই খেলে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমতে পারে। কোলোরেক্টাল ক্যানসারেরই একটি ধরন হলো কোলন ক্যানসার। তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ- অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার বাদ দিয়ে নিয়মিত দইসহ স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া উচিত।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

পাঠক প্রিয়