প্রাইম ডেস্ক »
গ্রিনস্প্যানের তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে ‘পুরুষদের অন্তর্বাস সূচক’ নামে একটি অর্থনৈতিক সূচকও রয়েছে। অন্তর্বাস বিক্রি কমার অর্থ হলো পুরুষরা এতটাই চাপে পড়ে গেছে যে তারা অন্তর্বাস পরিবর্তনের কথাও ভাবছে না।
পুরুষের অন্তর্বাস বিক্রি থেকে অর্থনীতির পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের সাবেক প্রধান অ্যালান গ্রিনস্প্যান।
অর্থনীতি চাঙা হবে নাকি কোনো মন্দা আসতে চলছে সেই পূর্বাভাস অর্থনীতিবিদরা বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করে থাকেন। কিন্তু পুরুষদের অন্তর্বাসের সাহায্যে অর্থনীতিকে ব্যাখ্যা করার মতো অদ্ভুত কথা ক’জন শুনেছেন?
অ্যালান গ্রিনস্প্যানের এই তত্ত্বের ব্যাখ্যা দিয়ে এনপিআর প্রতিবেদক রবার্ট ক্রুলউইচ বলেন, “পুরুষদের সবচেয়ে ব্যক্তিগত পোশাক হলো অন্তর্বাস। লকার রুমের লোকেরা ছাড়া কেউ তা দেখবে না। আর দেখলেও সেটা নিয়ে কে চিন্তা করে? আর তাই অন্তর্বাসের বিক্রি সাধারণত স্থিতিশীল। অন্তর্বাস বিক্রি কমার অর্থ হলো পুরুষরা এখন এতটাই চাপে পড়ে গেছে যে তারা অন্তর্বাস পরিবর্তনের কথাও ভাবছে না।”
এই ব্যাখ্যা কিন্তু নিছক কোনো বক্তব্য নয়। গ্রিনস্প্যানের তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে পুরুষদের অন্তর্বাস সূচক নামে একটি অর্থনৈতিক সূচকও রয়েছে। অর্থনৈতিক সংকটের সময় যেসব পণ্যের বিক্রি কমে যায় তার মধ্যে অন্তর্বাস অন্যতম। এই সূচক থেকে অর্থনৈতিক মন্দা থেকে পুনরুদ্ধারের পূর্বাভাসও পাওয়া যায়।
২০০৭ থেকে ২০০৯ সালের বৈশ্বিক মন্দার সময় যুক্তরাষ্ট্রে পুরুষদের অন্তর্বাস বিক্রি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। অন্যদিকে ২০১০ সালে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সময় অন্তর্বাসের বেচাবিক্রি বাড়ে।
অর্থনীতি বিশ্লেষকরা সবসময়ই মন্দার পূর্বাভাস দিতে সক্ষম, এমন সব ইঙ্গিত খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। প্রাণীরা উঁচুভূমির দিকে পালাতে শুরু করলে যেমন সুনামির পূর্বাভাস পাওয়া যায়, অর্থনীতির ক্ষেত্রেও অনেকটা একই বিষয় কাজ করে।
একারণেই মন্দার পূর্বাভাস ব্যাখ্যায় ইনভার্টেড ইল্ড কার্ভ বা উল্টো ইল্ড রেখা নিয়ে এত আলোচনা চলে। অর্থাৎ, স্বল্পমেয়াদী বন্ডের সুদ যখন দীর্ঘমেয়াদী বন্ডের চেয়ে বেশি থাকে তখন তা বিনিয়োগকারীদের অনাস্থা অর্থাৎ অর্থনৈতিক সংকটের ইঙ্গিত দেয়। ৭০ এর দশক থেকে প্রতিটি মন্দার আগেই এই বিষয়টি দেখা গেছে।
তবে এসব জটিল ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ছাড়াও নিম্নমুখী অর্থনীতির ব্যাখ্যা দেওয়ার মজার সব তত্ত্ব রয়েছে। এর সবই যে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পূর্বাভাস দিতে পারে তাও নয়। অন্তর্বাস সূচকের মতো যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিবিদদের এরকম অদ্ভুত আরও কিছু সূচক দেখে নেওয়া যাক।
আকাশচুম্বী ভবন নির্মাণ ইঙ্গিত দেয় মন্দার
ব্রিটিশ বহুজাতিক ব্যাংক বার্কলেস ক্যাপিটালের পরিচালক ও সাবেক আবাসন খাত বিশেষজ্ঞ অ্যান্ড্রু লরেন্স ১৯৯৯ সালে ‘স্কাইস্ক্র্যাপার ইনডেক্স’ বা ‘আকাশচুম্বী ভবনের সূচক’ তৈরি করেন।
লরেন্সের ব্যাখ্যা অনুসারে, আকাশচুম্বী বহুতল ভবনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার অর্থ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শীঘ্রই হ্রাস পেতে চলেছে। বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবনের রেকর্ড ভেঙে কোনো ভবন নির্মিত হলে মন্দা বা অর্থনৈতিক সংকট আসন্ন।
১৮ শতকের শেষ দিকেও এই সূচক সত্য প্রমাণিত হয়েছে। এমনকি এখনও অর্থনৈতিক সংকট ও বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায় বলে এক সাক্ষাৎকারে জানান অ্যান্ড্রু লরেন্স।
গ্রেট ডিপ্রেসন শুরুর সময় ১৯৩০ সালে এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং নির্মাণের কাজ শেষ হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন মন্দায় পড়ছে তখনই ৭০ এর দশকের শুরুতে সিয়ার্স টাওয়ার (বর্তমানে উইলিস টাওয়ার) ও ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের টুইন টাওয়ার উদ্বোধন করা হয়। ২০০৯ সালের অক্টোবরে ইমার নামের আবাসন নির্মাণ প্রতিষ্ঠান বুর্জ খলিফার বাইরের অংশের কাজ সম্পন্ন করে। এর দুই মাস পরেই দুবাই সরকার খেলাপি হতে চলেছিল।
লরেন্স এসব ভবন নির্মাণের সঙ্গে মারাতিরিক্ত বিনিয়োগ, স্বল্পহারে প্রদত্ত ঋণ ও উন্মত্ততার সম্পর্ক ব্যাখ্যা করেছেন।
বর্তমানে অধিকাংশ রেকর্ড ব্রেকিং উঁচু-ভবন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ আটকে আছে। তবে মানুষ এখন অন্য উপায়ে আকাশ ছুঁতে চাইছে। জেফ বেজোস, ইলন মাস্ক, রিচার্ড ব্র্যানসনরা এখন মহাকাশে যাওয়া নিয়ে উন্মত্ত!
মন্দায় বাড়ে লিপস্টিক বিক্রি
৯/১১-র পর অর্থনৈতিক মন্দার সময় প্রসাধন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এস্টে লডারের চেয়ারম্যান লিওনার্ড লডার লিপস্টিক সূচক তৈরি করেন। এই সূচক অবশ্য পুরুষের অন্তর্বাস সূচকের উল্টো। অর্থনৈতিক সংকটের সময় নারীদের লিপস্টিকের মতো ছোটখাটো প্রসাধন সামগ্রী কেনার প্রবণতা বাড়ে। নারীরা ব্যয়বহুল জিনিস কেনাকাটার পরিবর্তে সাশ্রয়ী ছোট পণ্যগুলো কেনার চেষ্টা করে।
২০০১ সালের মন্দার সময় যুক্তরাষ্ট্রে লিপস্টিক বিক্রি ১১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ে। অন্যদিকে, ৩০ এর দশকের গ্রেট ডিপ্রেশনের সময় যুক্তরাষ্ট্রে সামগ্রিকভাবে প্রসাধনী বিক্রি ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।
তবে এই তত্ত্বের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে। ক্লাইন অ্যান্ড কোম্পানির গবেষণা অনুসারে অর্থনৈতিক মন্দার সময় লিপস্টিক বিক্রি ঠিকই বাড়ে, তবে অর্থনীতি চাঙ্গা হলেও লিপস্টিক বিক্রি বাড়তে দেখা যায়।
কোভিড মহামারির সময় অর্থনৈতিক সংকোচনকালে লিপস্টিক সূচক স্কিনকেয়ার পণ্যের দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে বলে মনে করেন এস্টে লডারের সিইও ফ্যাব্রিজিও ফ্রিদা। এর কারণ ঘরে বসে কাজ করায় মানুষ মেকাপের চেয়ে স্কিনকেয়ার পণ্য ব্যবহারের দিকে বেশি ঝুঁকে।
“লিপস্টিক সূচকের জায়গা দখল করেছে ময়েশ্চারাইজিং সূচক। নাম পরিবর্তিত হলেও সূচকের ধারণা একই থাকছে,” বলেন ফ্রিদা।
মন্দার সময় লাভ করে ডেটিং সাইট
টাকা হারানোর চেয়ে বেশি খারাপ কী হতে পারে? টাকা হারিয়ে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়া!
মন্দার সময় মানুষ একাকী হয়ে পড়ে। আর তাই লোকে সঙ্গ পেতে মানুষ খুঁজে। ডেটিং সাইটগুলোতেও বাড়ে ভীড়। ২০০৯ সালের মন্দার সময় ডেটিং সাইট ম্যাচ সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ চতুর্থ ত্রৈমাসিক আয় করে।
কোভিড মাথা চাড়া দিয়ে উঠলে অর্থনৈতিক ধাক্কার সময় ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের মার্চে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদর ১৪১ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।
তবে এটা সহজেই ব্যাখ্যা করা সম্ভব। মন্দার সময় বেকারদের প্রচুর সময় থাকে। অন্যদিকে অনলাইন ডেট অপেক্ষাকৃত সস্তা। আর দুখের দিনেই সঙ্গীর প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। তাই এসব অ্যাপ ও সাইটে মানুষের ঢু মারার সংখ্যাও বেড়ে যায়।
এই সূচকটি সঠিক হলে বিশেষজ্ঞদের চিন্তিত হওয়া উচিত। ডেটিং সাইট বাম্বল চলতি মাসে সর্বকালের সর্বোচ্চ চতুর্থ ত্রৈমাসিক আয়ের ঘোষণা করেছে যার ফলে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দর বৃদ্ধি পেয়েছে ২২ শতাংশ পর্যন্ত।
সূত্র : দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড