প্রাইম ভিশন ডেস্ক »
চলতি বছরের জুলাইয়ে চালু হতে যাচ্ছে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল (পিসিটি), নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। এটি চালু হলে দীর্ঘ ১৪ বছর পর নতুন টার্মিনাল পাবে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর।
নতুন এই টার্মিনালে একসঙ্গে তিনটি কনটেইনার জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো-নামানো যাবে। এ ছাড়া ডলফিন জেটিতে তেলবাহী জাহাজ থেকে পণ্য খালাস করা যাবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, নতুন টার্মিনাল দিয়ে বছরে ৫ লাখ টিইইউএস (টোয়েন্টি ফিট ইকুইভিলেন্ট ইউনিটস) কনটেইনার হ্যান্ডলিং হবে।
প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীর পশ্চিম পাড়ে চট্টগ্রাম ড্রাইডক থেকে বোটক্লাব পর্যন্ত ৩২ একর এলাকাজুড়ে নির্মিত হয়েছে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল (পিসিটি)।
প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হয়েছে ৬০০ মিটার দীর্ঘ তিনটি জেটি। থাকছে ২২০ মিটার দীর্ঘ একটি ডলফিন জেটিও। নতুন এ জেটি চালু হলে চট্টগ্রাম বন্দরের বাৎসরিক সক্ষমতা বাড়বে সাড়ে ৪ হাজার টিইইউএস (টোয়েন্টি ফিট ইকুইভিলেন্ট ইউনিটস)। চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে বর্তমানে ৩২ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং হচ্ছে।
এক লাখ ১২ হাজার বর্গমিটার অভ্যন্তরীণ ইয়ার্ডের পাশাপাশি ১৬ একর আয়তনের একটি কন্টেইনার ইয়ার্ডটিকে পিসিটির জন্য ডেডিকেটেড করা হচ্ছে। যেখানে একসঙ্গে সাড়ে ৪ হাজার টিইইউএস (টোয়েন্টি ফিট ইকুইভিলেন্ট ইউনিটস) কনটেইনার রাখা যাবে।
প্রাক-সমীক্ষা অনুযায়ী পিসিটি পরিচালনা বার্ষিক ব্যয় হবে ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, “পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে চালু হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব সক্ষমতা দিয়েই নতুন এ টার্মিনাল চালু করা হচ্ছে। এটি চালু হলে বন্দরে কনটেইনার ওঠানো নামানোর জেটির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১৬টিতে। ফলে বহির্নোঙ্গরে জাহাজের অপেক্ষাকাল কমবে আসবে।”
পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মিজানুর রহমান সরকার বলেন, “পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের নির্মাণকাজ ৯৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। মোহনার কাছাকাছি হওয়ায় বন্দরের মূল জেটির চেয়ে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে কম সময়ে জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে। পিসিটির তিনটি জেটিতে একই সঙ্গে ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে।”
বন্দরের নিজস্ব সক্ষমতায় চালু হচ্ছে পিসিটি
পিপিপির ভিত্তিতে এ প্রকল্প চালু করার কথা থাকলেও নিজেদের প্রয়োজনে আগামী জুলাই মাস থেকেই টার্মিনালের অপারেশন চালু করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। যা পরবর্তীতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেওয়া হবে। এরই মধ্যে টার্মিনাল অপারেশন পরিচালনা ও বিনিয়োগে প্রস্তাব দিয়েছে আন্তর্জাতিক বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান।
এর মধ্যে আছে- সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল, দুবাইয়ের ডিপি ওয়ার্ল্ড, ভারতের আদানি পোর্ট অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোন লিমিটেড ও সিঙ্গাপুরের পিএসএ।
এ বিষয়ে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, “আপাতত যেসব জাহাজে ক্রেনের সুবিধা আছে সেসব জাহাজ এই টার্মিনালে ভেড়ানো হবে। এছাড়াও ডলফিন জেটিতে ভিড়বে তেলবাহী জাহাজ। চার প্রতিষ্ঠান পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) অপারেশনের কাজ পরিচালনা করতে চাইলেও এখনও কোনো প্রতিষ্ঠানকেই চূড়ান্ত করা হয়নি। যারাই এ কাজ পাবেন তারা টার্মিনালের জন্য গ্রেন্ডিক্রেনসহ বাকি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।”
লালদিয়ার চরে হচ্ছে পিসিটির ব্যাকআপ ইয়ার্ড
বছরখানেক আগে কর্ণফুলী নদীর মোহনার সংলগ্ন লালদিয়ার চরের ৫২ একর ভূমি থেকে ২ হাজার ৩০০ পরিবারকে উচ্ছেদ করে জায়গার দখলে নেয় চট্টগ্রাম বন্দর। কিন্তু সম্প্রতি সে প্রকল্প থেকে সরে এসেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। উদ্ধার হওয়া ওই জায়গায় বর্তমানে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের (পিসিটি) ব্যাকআপ ইয়ার্ড করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, “লালদিয়া চরে মাল্টিপারপাস টার্মিনাল প্রকল্পটি এখন আর হচ্ছে না। প্রকল্পটি সরকারের পিপিপি সংক্রান্ত দপ্তর থেকে বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। এখন পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের পর বে-টার্মিনাল বাস্তবায়নের দিকে আমরা এগোচ্ছি। তবে লালদিয়ার চরে বন্দরের জায়গাতে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালের ব্যাকআপ ইয়ার্ড করার চিন্তাভাবনা চলছে।”
২০১৭ সালের ১৩ জুন পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল প্রকল্পের অনুমোদন দেয় সরকার। ১ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের শেষ সময় ছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
পরে ব্যয় আরও ১ হাজার ৩৯৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাবের সঙ্গে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চেয়ে আরডিপি বরাবর আবেদন করে প্রকল্প সংস্থা।
এদিকে গত মার্চে টার্মিনাল পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্পটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় বাস্তবায়নের জন্য ‘ইকুইপ, অপারেট অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স অব পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল’ প্রকল্পের নীতিগত অনুমোদন দেয় সরকার।
খবর সূত্র : টিবিএস