মঙ্গলবার, নভেম্বর ১৮, ২০২৫
spot_img
Homeএই মুহুর্তেচট্টগ্রামে এক বছরে ২৫ ঋণখেলাপির কারাদণ্ড

চট্টগ্রামে এক বছরে ২৫ ঋণখেলাপির কারাদণ্ড

প্রাইম স্পেশাল নিউজ »

৩০০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে বাগদাদ গ্রুপের কর্ণধার ফেরদৌস খান আলমগীরের প্রায় পুরো পরিবারই এখন থাকে কানাডায়।

ফেরদৌস খান আলমগীর নিজেই ১৫৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ১২ বছর অধরা ছিলেন। সেই বিলাসী জীবন ছেড়ে এখন তার জীবন কাটছে কারাগারের আঁধারে! তাকে চার মামলায় ২০ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালত।

এর আগে আলমগীরের স্ত্রী মেহেরুন নেছাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সে সময় তাকেও কারাগারে পাঠান আদালত; বর্তমানে তিনি জামিনে আছেন।

শুধু ঋণখেলাপি এই স্বামী-স্ত্রী নন; আদালতের এমন তৎপরতায় বছরের পর বছর ব্যাংকের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিলাসী জীবন কাটানো ঋণখেলাপিদের কেউ ঢুকেছেন কারাগারে, কেউ সাজার খবরে ফেরারি। কারও নামে জারি হচ্ছে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা।
চিটাগাং সোপ অ্যান্ড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রির মালিক মোহাম্মদ নুরুন্নবী তালুকদার ও তার মেয়ে ব্যবসায়ী আইভি নাসরিন ঋণখেলাপি হয়েও ১৪ বছর ধরে মুক্ত ঘুরে বেড়িয়েছেন। এক্সিম ব্যাংকের কর্তারা তাদের পেছন পেছন ঘুরেও আদায় করতে পারেননি ঋণের টাকা।

সম্প্রতি আদালতে হাজিরা দিতে এসে ঋণখেলাপি ব্যবসায়ী নুরুন্নবীকে সোজা ঢুকতে হয়েছে কারাগারে। একই মামলায় ফেরার ব্যবসায়ীকন্যাকে পাঁচ মাসের কারাদণ্ড দিয়ে পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।

সর্বশেষ এক বছরে ঋণখেলাপি ২৫ ব্যবসায়ীকে কারাদণ্ড দিয়েছেন চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালত। ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করায় কারাগারে পাঠিয়েছেন পাঁচজনকে। আদালতের বিচারক (যুগ্ম জেলা জজ) মো. মুজাহিদুর রহমান এসব আদেশ দেন।

বেড়েছে খেলাপি ঋণ আদায়ের পরিমাণ

অর্থঋণ আদালতের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, আগে ঋণখেলাপি ব্যবসায়ীদের সাজা হওয়ার রেকর্ড ছিল কম। বর্তমানে্ আদালতের কড়া অবস্থানের কারণে খেলাপি ঋণ আদায়ের পরিমাণ বাড়ছে।

অর্থঋণ আদালতে দীর্ঘদিন ধরে মামলা পরিচালনা করছেন চট্টগ্রামের সিনিয়র আইনজীবী মো. আবুল হাসান সাহাবউদ্দিন।

তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিজের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে বলেন, “এক বছর আগেও ঋণখেলাপি ব্যবসায়ীর সাজা হওয়ার রেকর্ড ছিল খুবই কম। গ্রাহকের লগ্নি করা টাকা ঋণ দিয়ে তা আদায়ের জন্য ব্যবসায়ীদের দ্বারে দ্বারে আর আদালতে চক্কর কাটতে কাটতেই সময় চলে যেতো। তবে গত এক বছরে চট্টগ্রামে সে ঘটনা কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে।”

“মূলত আদালতের বিচারক (যুগ্ম জেলা জজ) মো. মুজাহিদুর রহমান কাজে যোগ দেওয়ার পর থেকে ঋণখেলাপি ব্যবসায়ীদের সাজা দেওয়ার পরিমাণ বেড়ে গেছে। এ কারণে ব্যাংক গুলোতে খেলাপি ঋণ আদায়ের পরিমাণ বাড়ছে,” বলেন তিনি।

আবুল হাসান আরও জানান, শুধুমাত্র চট্টগ্রামে সোনালী ব্যাংকের আগ্রাবাদ প্রায় ৩০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায় করেছে। সবমিলিয়ে চট্টগ্রামের ব্যাংকিং সেক্টরে এ আদায়ের পরিমাণ কয়েকশ কোটি টাকার বেশি হবে।
আরেক আইনজীবী জিয়া হাবীব আহসান , “বর্তমান বিচারক মো. মুজাহিদুর রহমানের একের পর এক ঋণখেলাপিদের সাজা প্রদান ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ঘটনায় চট্টগ্রামে ঋণ আদায়ের পরিমাণ বেড়েছে আশাতিতভাবে। সব মিলিয়ে দীর্ঘদিন খেলাপি ছিলো এমন প্রায় ১০ শতাংশ ঋণ গত একবছরে আদায় হয়েছে।”

এক বছরে দণ্ডিত ২৫ ঋণখেলাপি ব্যবসায়ী

ঋণখেলাপি মামলায় পাঁচ মাস করে দণ্ডিত পলাতক চট্টগ্রামের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা হলেন- ইলিয়াছ ব্রাদার্স লিমিটেডের পরিচালক বিএনপি নেতা মো. সামশুল আলম, পরিচালক যথাক্রমে মো. নুরুল আবছার, মো. নুরুল আলম, কামরুন নাহার বেগম ও তাহমিনা বেগম।

আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি খাদিজাতুল আনোয়ার সনির স্বামী পারভেজ আলম ও তার শ্বশুর এমএম আলম, শীর্ষ ব্যবসায়ী মো. জয়নাল আবেদিন, মেসার্স চট্টগ্রাম এগ্রো প্রডাক্টসের মালিক মো. শাহ আলম ও তার স্ত্রী আয়েশা বেগম, জেড অ্যান্ড ডে ইন্টারন্যাশনালের মালিক জয়নাল আবদীন ও আলাউদ্দিন, চিটাগাং ইস্পাত লিমিটেডের মালিক হারুনুর রশিদ ও তার স্ত্রী আনজুমান আরা বেগমও রয়েছেন এই তালিকায়। খবর টিবিএস।

অন্যান্যরা হলেন- মেসার্স সাইব স্টিল রি-রোলিং মিলসের মালিক ইসরাত জাহান মনি ও গ্যারান্টার মোহাম্মদ সিরাজউদ্দৌলা, ফোর এইচ গ্রুপের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মামুনুর রশীদ চৌধুরী ও ব্যবসায়ী মো. নুরনবী, ব্যবসায়ী আইভি নাসরিন, মোহাম্মদ নুরুন্নবী তালুকদার, ফেরদৌস খান আলমগীর, মেসার্স ইউসুফ অ্যাপারেলস লিমিটেডের এমডি পারভেজ মোহাম্মদ ইউসুফ, চেয়ারম্যান নিশাত সুলতানা ও মেহেরুন নেছা।

১৩৭৩ ঋণখেলাপির মাথায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

২০২১ সালের ১৯ জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত চট্টগ্রামের ১ হাজার ৩৭৩ জন ঋণখেলাপির বিরুদ্ধে আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তবে এসব পরোয়ানার বিপরীতে আসামিদের গ্রেপ্তারের হার খুবই কম।

এ ব্যাপারে আদালতের পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করা হয়েছে, শীর্ষ ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে আদালত থেকে ইস্যু করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা যথাসময়ে তামিল না হওয়ায় মামলাগুলো যথাসময়ে নিষ্পত্তি করা যাচ্ছে না। সর্বশেষ ২২ মে শীর্ষ ঋণখেলাপিদের গ্রেপ্তারে সিএমপিকে বিশেষ নির্দেশ অর্থঋণ আদালত।

এক মামলার রায়ে আদালত উল্লেখ করেন, ‘শীর্ষ ঋণ খেলাপিরা গ্রেপ্তার এড়াতে সক্ষম হওয়ায় ব্যাংকিং খাতের বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ অনাদায়ী হয়ে পড়েছে এবং আদালতে মামলার জট সৃষ্টি হয়েছে।’
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল না হওয়ায় “পুলিশি কার্যক্রমের দুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে” বলেও মন্তব্য করেছেন আদালত।
এই ব্যর্থতার কারণ ব্যাখ্যা করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, “অর্থঋণ আদালতের আসামিরা তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয়টি আগেই জেনে যায়। ফলে পুলিশ অভিযান পরিচালনার আগেই তারা পালিয়ে যান।”
এছাড়া সিআর (কোর্ট রেজিস্টার্ড) মামলায় আসামি গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে পুলিশ বিভিন্ন ধরনের চাপের মুখোমুখি হয় বলেও জানান তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

পাঠক প্রিয়