শুক্রবার, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৫
spot_img
Homeচট্টগ্রামদুই কোরীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে চট্টগ্রাম বন্দরের চুক্তি ৩১ মে

দুই কোরীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে চট্টগ্রাম বন্দরের চুক্তি ৩১ মে

বে টার্মিনাল প্রকল্প

প্রাইম ভিশন ডেস্ক »

চট্টগ্রাম বন্দরের বে টার্মিনাল প্রকল্পের ডিটেইল ড্রয়িং ডিজাইন করতে বন্দরের সাথে দুটি কোরিয়ান পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের চুক্তি অনুষ্ঠিত হচ্ছে আগামী ৩১ মে। কুনওয়া ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড কনসালটিং কোম্পানি লিমিটেড এবং ডিয়েনইয়াং ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডের সাথে ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে এই চুক্তি অনুষ্ঠিত হবে।

চুক্তির আওতায় প্রতিষ্ঠান দুটি বে টার্মিনাল প্রকল্পে বন্দরের অর্থায়নে নির্মিত একটি টার্মিনালের ডিটেইল ড্রয়িং ডিজাইন, টেন্ডার ডকুমেন্ট তৈরী এবং কন্সট্রাকশন কাজের তত্ত্বাবধান করবে। প্রতিষ্ঠান দুটি প্রথম ধাপে ৬ মাসে ডিটেইল ড্রয়িং ডিজাইন করবে। পরবর্তী আড়াই বছরে কনস্ট্রাকশন কাজের তত্ত্বাবধান করবে। এসব কাজের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ব্যয় হবে ১২৬ কোটি ৪৯ লাখ ৭৩ হাজার ৯৮৬ টাকা।

এর আগে গত ৭ এপ্রিল সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ সংক্রান্ত প্রস্তাবের অনুমোদন দেয় সরকার।

২০১৫ সালে সমুদ্র উপকূলে বে টার্মিনাল প্রকল্প নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। সরকারি প্রকল্পের অগ্রাধিকার অনুযায়ী ২০১৯ সালের জুলাই মাসে বে-টার্মিনাল প্রকল্পটি পাবলিক প্রাইভেট-পার্টনারশিপ (পিপিপি) পদ্ধতিতে বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দেন।

প্রকল্পের আওতায় মোট ৩টি টার্মিনাল নির্মিত হবে। এর মধ্যে একটি নির্মিত হবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অর্থায়নে। বাকি দুটি টর্মিনাল পিপিপি ভিত্তিতে বিদেশি বিনিয়োগে নির্মাণ করা হবে। বিদেশি কোন প্রতিষ্ঠান বাকি টার্মিনাল দুটি নির্মাণ করবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

তবে ইতিমধ্যে চীনের চায়না মার্চেন্টস স্পোর্ট হোল্ডিং কোম্পানি লিমিটেড; সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ড; সিঙ্গাপুরভিত্তিক কোম্পানি পিএসএ ইন্টারন্যাশনাল, ডেনমার্কের এপিএম টার্মিনালস; ভারতের আদানি পোর্ট; দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই গ্রুপ এবং ইন্টারন্যাশনাল পোর্ট ডেভেলপমেন্ট কো অপারেশন বে টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার প্রস্তাব দিয়েছে।

বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি নিয়ে বর্তমানে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ২০২৫ সাল। এই সময়ের মধ্যেই বে টার্মিনালে জাহাজ ভেড়াতে চায় বন্দর কর্তৃপক্ষ। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তির মাধ্যমে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে বড় একটি ধাপ পার হতে যাচ্ছে।

বে টার্মিনাল প্রকল্পের ফোকাল পার্সন চট্টগ্রাম বন্দরের নির্বাহী প্রকৌশলী রাফিউল আলম বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষের অর্থায়নে যে টার্মিনালটি নির্মিত হবে; মূলত সেটির ডিটেইল ড্রয়িং ডিজাইনিংয়ে দুই কোরীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে চট্টগ্রাম বন্দরের চুক্তি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই টার্মিনালে কয়টি জেটি নির্মিত হবে, কয়টি জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব, টার্মিনাল নির্মাণে কত টাকা ব্যয় হবে, টেন্ডার ডকুমেন্ট তৈরী সহ বিভিন্ন বিষয় চূড়ান্ত হবে।

চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি নিশ্চয়ই ইতিবাচক খবর। তবে যথাসময়ে যাতে প্রকল্পের কাজ শেষ হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে সাড়ে ৯ মিটার গভীরতা ও ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের চেয়ে বড় জাহাজ প্রবেশ করতে পারে না। বে টার্মিনালে ভিড়তে পারবে ১২ মিটার গভীরতা ও ২৮০ মিটার পর্যন্ত দৈর্ঘ্যের জাহাজ। ভেড়ানোর ক্ষেত্রে জোয়ার-ভাটার উপর নির্ভর করতে হবেনা। ৮৭১ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন ও সরকারি জমি ছাড়াও সমুদ্র থেকে জেগে উঠা আরও এক হাজার ৬০০ একরসহ প্রায় দুই হাজার ৫০০ একর জমিতে বে টার্মিনাল প্রকল্প নির্মিত হচ্ছে।

বে টার্মিনাল প্রকল্পটি চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান অপারেশনাল এরিয়ার প্রায় ৬ গুণ। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ৬ হাজার কন্টেইনারবাহী বহনক্ষমতা সম্পন্ন জাহাজ বার্থিং করানো সম্ভব হবে। বর্তমান বন্দরের জেটিতে সর্বোচ্চ ১৮০০ একক ধারণক্ষমতার কনটেইনার জাহাজ ঢুকতে পারে।

এখন বন্দরে জোয়ার-ভাটার ওপর ভিত্তি করে জাহাজগুলো জেটিতে ভেড়ে। বে টার্মিনালে দিনে-রাতে জাহাজ জেটিতে ভিড়তে ও ছেড়ে যেতে পারবে। জোয়ার-ভাটার উপর নির্ভর করতে হবেনা। এতে পণ্য পরিবহন খরচ ও প্রচুর সময় সাশ্রয় হবে। চ্যানেলের প্রশস্ততা রয়েছে সর্বনিম্ন ৮৫০ থেকে সর্বোচ্চ ১২৫০ মিটার। এই প্রকল্পে ১৫ হাজার ট্রাক রাখার ব্যবস্থা থাকবে।

কর্ণফুলী নদীর চ্যানেলে বাঁকের কারণে জেটিতে জাহাজ আসতে ঝুঁকি নিতে হয়। বে টার্মিনালে সরাসরি জাহাজ ভিড়তে পারবে। বে টার্মিনালে পণ্য জাহাজ থেকে নামিয়ে সরাসরি আউটার রিং রোড হয়ে চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়ক দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যেতে পারবে।  খবর সূত্র টিবিএস।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে জার্মান প্রতিষ্ঠান শেল হর্নের নেতৃত্বে ওই দেশের এইচপিসি হামবুর্গ পোর্ট কনসালটিং এবং বাংলাদেশের কেএস কনসালট্যান্টস লিমিটেড যৌথভাবে বে টার্মিনাল প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি (সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা) করে। সাড়ে ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে করা ওই সমীক্ষার প্রতিবেদনে প্রকল্পটি নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করার কথা উল্লেখ করা হয়। পরবর্তীতে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে একটি টার্মিনাল বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে এবং বাকি দুটি পিপিপি ভিত্তিতে করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

সৌদি-মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের জন্য কমলো বিমানের ভাড়া

চবিতে ১০ জন ছাত্রীকে বহিষ্কার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

পাঠক প্রিয়

সৌদি-মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের জন্য কমলো বিমানের ভাড়া

চবিতে ১০ জন ছাত্রীকে বহিষ্কার