শনিবার, ডিসেম্বর ৭, ২০২৪
spot_img
Homeমুল পাতা‘বন্ধুর’ বাসায় অসুস্থ জবি ছাত্রী, দুই সপ্তাহ পর হাসপাতালে মৃত্যু

‘বন্ধুর’ বাসায় অসুস্থ জবি ছাত্রী, দুই সপ্তাহ পর হাসপাতালে মৃত্যু

প্রাইম ভিশন ডেস্ক »

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ইংরেজি বিভাগের ২০১৬-১৭ বর্ষের মেধাবী শিক্ষার্থী অঙ্কন বিশ্বাস। স্নাতক ফলাফলে তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম। ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়সহ টেলিভিশনের ভালো বিতার্কিক। বিতর্কের সুবাদে বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির সাবেক সভাপতি ও আইন বিভাগের ২০১১-১২ বর্ষের শিক্ষার্থী শাকিল আহমেদের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে।

গত ২২ মার্চ প্রথমে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন অঙ্কন। পরে একই দিনে শাকিলের সঙ্গে বিয়ে করেন তিনি। তবে কিছুদিন না যেতেই এ সম্পর্কে বিপত্তি দেখা দেয়।

বিষয়টি মিমাংসার জন্য গত ২৪ এপ্রিল শাকিলের বাসায় যান অঙ্কন। সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়লে রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে নেন তিনি। সেখানে ভর্তি করে পালিয়ে যান শাকিল। পরে হাসপাতাল থেকে অঙ্কনের বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু আব্দুল মুকিত চৌধুরী সানীকে ফোনে খবর দেয়া হয়। সেখানে সপ্তাহখানেক চিকিৎসার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ১ মে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নেয়া হয়। এরপর গত রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

অঙ্কনের বন্ধু সানী বলেন, ২৪ এপ্রিল দুপুর দেড়টার দিকে আজগর আলী হাসপাতাল থেকে অঙ্কন অসুস্থ বলে একটা ফোন আসে। পরে সেখানে গিয়ে অঙ্কনকে জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেখতে পাই। ডাক্তাররা তার শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছিলেন। এ সময় হাসপাতালে শাকিল ও তার ভাই হিমেলকে দেখতে পাই। শাকিল ভাই ও বন্ধুর পরিচয়ে ভর্তি করাতে চাইলে প্রথমে ভর্তি করায়নি কর্তৃপক্ষ। পরে স্বামী পরিচয়ে ভর্তি করান।

তিনি আরও বলেন, শাকিল প্রথমে ঘটনা বলতে চাইছিলেন না। পরে বলেন, বাসা থেকে হয়ত কিছু খেয়ে তার বাসায় এসেছে অঙ্কন। সেখানে কথা বলার একপর্যায়ে অসুস্থ হয়ে যান।

আজগর আলী হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ এপ্রিল দুপুর ২টায় হাসপাতালে অঙ্কনকে নিয়ে আসে শাকিল আহমেদ ও তার এক বন্ধু। শুরু থেকেই অবস্থা ক্রিটিক্যাল হওয়ায় এটাকে পুলিশ ফাইল করা হয়েছে। আইসিইউতে তার চিকিৎসা চলছিলো। অবস্থার অবনতি হলে গত ১ মে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) স্থানান্তর করা হয়।

তার সহপাঠীরা জানান, হঠাৎ করেই অঙ্কণের ব্রেইন স্ট্রোক এবং হার্ট ফেইল হয়। তারপর অক্সিজেন ঠিক মতো নিতে পারছিলো না, যার কারণে শরীরের বিভিন্ন অর্গান নিস্তেজ হওয়া শুরু করেছিলো। শুরু থেকেই ওর অবস্থা খুবই ক্রিটিকাল ছিলো। যার ফলে অঙ্কনকে পুরোপুরি লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। এদিকে অঙ্কনের চিকিৎসা চালিয়ে নিতে বিভাগের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা ফান্ড সংগ্রহ করে আসছিলেন।

এদিকে অঙ্কনের মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন তার সহপাঠি ও বিভাগের শিক্ষার্থীরা। অঙ্কণের মৃত্যুকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে জেবা সাজিদা মৌ লিখেন, অংকনের মৃত্যুটা অপমৃত্যু বলে আমরা মনে করি। অঙ্কনকে হাসপাতালে ভর্তি করায় ওর বয়ফ্রেন্ড আর এক বন্ধু। অঙ্কন সেন্সলেস হয় ওর বয়ফ্রেন্ডের বাসাতেই। মানুষের সাধারণ টেনডেন্সি হল আপনজনের বিপদে পাশে দাঁড়ানো। আমরা অঙ্কনের বয়ফ্রেন্ডকে পাশে পাই নাই। আমরা সিনিয়র-জুনিয়র যখন ওর ফান্ডিং এর জন্য প্রানপণ লড়ে যাচ্ছিলাম তখন ওর বয়ফ্রেন্ডের কাজ কী ছিল?

তবে গত ২২ মার্চ অঙ্কনের সঙ্গে শাকিলের কোর্ট ম্যারেজের একটি হলফনামা ডেইলি বাংলাদেশের কাছে আসে। বিয়ের বিষয়ে আইনজীবী মিরাজ আকন বলেন, প্রথমে মেয়েটি এফিডেভিট করে মুসলমান হয়। তারপর বিয়ে করে। তিন জনের সাক্ষ্য ওখানে আছে।

অঙ্কনের বাবা তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, শাকিলের সঙ্গে সম্পর্ক আছে কিনা আমরা কিছুই জানতাম না। এখন লোকমুখে শুনছি। বিয়ে হলে তো আমাদেরকে জানাতো। আমার মেয়ে এমন না। বিয়ের কাগজপত্রগুলো জালও হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, এরকম কিছু জানলে আমি ব্যবস্থা নিতাম। আমার মেয়ে মরেই যাবে, বাবা হিসেবে এরকম কোনো সিদ্ধান্ত আমি নিতে পারি না।

এ দিকে শাকিল অঙ্কনকে হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে পলাতক রয়েছেন। মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

রাজধানীর গেন্ডারিয়া থানার ওসি মো. আবু সাঈদ আল মামুন বলেন, এ ঘটনায় একটা পুলিশ ফাইল হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে যদি কোনো অভিযোগ দেয়া হয় তাহলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল বলেন, এই বিষয়টা শুরু থেকেই আমাদের জানা আছে। পরিবার থেকে যদি কোনো সহযোগিতা চায়, আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

পাঠক প্রিয়