প্রাইম ডেস্ক »
অর্থনৈতিক সঙ্কটের পটভূমিতে চলমান সহিংস বিক্ষোভের মধ্যে এবার পদত্যাগ করলেন শ্রীলঙ্কার মন্ত্রিসভার সকল সদস্য। প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে ও তার ভাই প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ব্যতীত মন্ত্রিসভার ২৬ জন সদস্যই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।
মন্ত্রিসভার ২৬ সদস্যর পদত্যাগের পর শ্রীলংকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর অজিত নির্ভাদও পদত্যাগ করেছেন। সোমবার এক টুইটবার্তায় অজিত নির্ভাদ বলেন, দেশের মন্ত্রিসভার সদস্যরা পদত্যাগ করায় আমি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের পদ থেকে ইস্তফা দিলাম।
রাজাপাকসে পরিবারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষুব্ধ অনেক বিক্ষোভকারী বলছেন, এই পদক্ষেপ অর্থহীন।
বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে কারফিউ জারি করেছিল শ্রীলঙ্কান সরকার। কিন্তু কারফিউ উপেক্ষা করেই প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগের দাবিতে কলম্বোর পথে নেমে আসেন শত শত বিক্ষোভকারী।
চলমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যেই শ্রীলঙ্কায় ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, ইউটিউব এবং হোয়াটসঅ্যাপ ও ভাইবারের মতো ম্যাসেজিং প্ল্যাটফর্মগুলো ব্লক করে দেয় দেশটির টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা।
১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভ করার পর বিগত ৭৪ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে শ্রীলঙ্কা। বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে সেখানে গুরুত্বপূর্ণ পণ্য আমদানি ব্যাহত হচ্ছে।
দেখা দিয়েছে বড় ধরনের বিদ্যুৎ সঙ্কট। দিনের বেশিরভাগ সময়েই বর্তমানে শ্রীলঙ্কায় বিদ্যুৎ থাকে না। জ্বালানি ছাড়াও খাদ্য এবং ওষুধপত্রের অভাব দেখা দিয়েছে। ফলে জনগণের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
শ্রীলঙ্কার শিক্ষামন্ত্রী দীনেশ গুনবর্ধন রোববার সাংবাদিকদের জানান, মন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।পদত্যাগকারীদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নিজের ছেলে নামাল রাজাপাকসেও রয়েছেন। এর আগে নামাল টুইটে বলেন, তিনি আশা করছেন যে জনগণ ও সরকারের জন্য একটি স্থিতিশীল রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করবে এ সিদ্ধান্ত।
অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট নিজে ক্ষমতা না ছাড়ায় অর্থনৈতিক সংকটের পেছনে প্রেসিডেন্ট ও তার পরিবারকে দায়ী করা অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একজন লিখেছেন, “আমরা চাই আপনারা সবাই চলে যান – রাজাপাকসে, মন্ত্রিসভা, তাদের রাজনৈতিক দোসর, দুর্নীতির সঙ্গী, তাদের মিডিয়ার লোকেরা।”
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দেশটিতে সবজির দাম দ্বিগুণ বেড়েছে। কলম্বোর একটি সুপারমার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, গম এবং চাল বিকোচ্ছে যথাক্রমে কেজিপ্রতি ২৫১ টাকা এবং ২১৭ টাকায়।
প্রতি কেজি চিনির দাম পড়ছে ২৭৪ টাকা, নারকেল তেল বিক্রি হচ্ছে প্রতি লিটার ৯৭১ টাকায়। একটি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩৪ টাকায়। এছাড়াও এক কেজি গুঁড়াদুধের প্যাকেটের দাম এখন ২১৭২ টাকা।
দ্বীপরাষ্ট্রটির খুচরা মুদ্রাস্ফীতি ফেব্রুয়ারিতে দাঁড়ায় ১৭.৫% এবং খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি ২৫%-এর অধিক বেড়েছে, ফলে খাদ্যশস্য এবং ভোগ্যপণ্যের দাম অবিশ্বাস্যভাবে বেড়েছে। ওষুধ এবং গুঁড়াদুধের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে দেশটিতে।
তাছাড়া দিনের বেশিরভাগ সময়েই থাকছে না বিদ্যুৎ। বিক্ষোভকারীরা রাজাপাকসে সরকারকে সবকিছুর জন্য দায়ী করছে।
নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নিতে পারে আজ
শ্রীলঙ্কার নতুন মন্ত্রিসভা আজ সোমবার শপথগ্রহণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। দেশটির মন্ত্রিসভার ২৬ জন সদস্য রোববার রাতে এক বৈঠকের পর পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ায় নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর ছেলে নমাল রাজাপাকসে এক টুইট বার্তায় বলেছেন, এটি (মন্ত্রীদের পদত্যাগ) জনগণ ও সরকারের জন্য স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিতে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীকে সহায়তা করবে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিক্ষোভ দমন করতে শনিবার সন্ধ্যা থেকে ৩৬ ঘণ্টার কারফিউ জারি করেছে শ্রীলঙ্কার সরকার। সেই সঙ্গে বন্ধ করে দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। রাস্তায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। তবে কারফিউ উপেক্ষা করেই বিক্ষোভ করছে জনগণ।