প্রাইম ডেস্ক »
রফতানি আয়ে ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত আছে। সদ্য সমাপ্ত মার্চ মাসেও ৪৭৬ কোটি ২২ লাখ ডলার আয় হয়েছে। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫৪ দশমিক ৮২ শতাংশ বেশি। গত বছর মার্চে ৩০৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার রফতানি আয় হয়েছিল। এসময়ে তৈরি পোশাক খাতে সার্বিকভাবে ৬০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
সোমবার (০৪ মার্চ) রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রফতানি আয়ের এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, সামগ্রিকভাবে চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে ৩ হাজার ৮৬০ কোটি ৫৬ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে, দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ লাখ ৩২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকার বেশি। এ আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৩ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি এবং চলতি অর্থবছরের আলোচ্য সময়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ১৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেশি।
করোনার ধাক্কা সামলে তৈরি পোশাক খাত ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ফলে প্রতিনিয়তই আশার আলো দেখাচ্ছে দেশের রফতানি আয়। কেননা আমাদের রফতানি আয় এখনো তৈরি পোশাক খাতের উপই নির্ভরশীল।
ইপিবির পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত তৈরি পোশাক, বিশেষত, নিটওয়্যার পণ্য রফতানি বেড়েছে। এছাড়া চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, কৃষি, প্লাস্টিক পণ্য রফতানি ইতিবাচক ধারায় ফেরার কারণে সার্বিকভাবে পণ্য রফতানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
ইপিবির তথ্যানুযায়ী, তৈরি পোশাকের পাশাপাশি হিমায়িত খাদ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, প্রকৌশল পণ্যের রফতানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সামগ্রিকভাবে পণ্য রফতানি বেড়েছে। যদিও আলোচ্য সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি কমেছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) পোশাক রফতানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১৪২ কোটি ৮৪ লাখ ডলার যা গত বছরের একই সময়ের রফতানি পরিমাণের চেয়ে ৩৩ দশমিক ৮১ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের একই সময়ে পণ্য রফতানি ছিল ২ হাজার ৩৪৮ কোটি ৭৯ লাখ ডলার।
পণ্যের ক্যাটাগরি অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে মার্চ মাস শেষে নিটওয়্যার পণ্য রফতানিতে ৩৫.২৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। অন্যদিকে ওভেন পোশাকের রফতানি ৩২.০৭ শতাংশ বেড়েছে। ফলে সকল পণ্যের রপ্তানিতে ইতিবাচক ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
ইপিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে কৃষিপণ্য রফতানিতে আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৫ কোটি ৮৪ লাখ ডলারে। প্লাস্টিক পণ্য রফতানি আয় বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশ। ৯ মাসে এ খাতে আয় হয়েছে ৮ কোটি ৪৬ লাখ ডলার। আলোচিত সময়ে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি আয়েও প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এসময় চামড়াজাত খাত থেকে রফতানি আয় এসেছে ৬৮ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৬ শতাংশ ও আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩০ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেশি।
তবে আলোচিত সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি কমেছে। মার্চ শেষে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে ৮৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং গত বছরের একই সময়ের চেয়ে আয় ৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ কম।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জন্য ৪ হাজার ৩৫০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার। সব শেষ তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রপ্তানি আয় ১৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেশি আছে। গত ২০২০-২১ অর্থবছর পণ্য রফতানি করে ৩ হাজার ৮৭৬ কোটি ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ।
রফতানি উপাত্ত অনুযায়ী পোশাক খাতের রফতানির ইতিবাচক ধারা লক্ষ্য করা গেলেও সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, তৈরি পোশাক খাতের কাঁচামাল, পণ্য জাহাজীকরণ খরচ, রং ও রাসায়নিক দ্রব্যের বাজার অনেক চড়া। কিন্তু পণ্য উৎপাদন খরচ বাড়ার অনুপাতে পোশাকের দাম সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে বাড়ছে না। এছাড়া, রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধেও প্রভাবেও তৈরি পোশাক খাত নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।
রফতানি বাড়ার কারণ হিসেবে তারা বলেন, একদিকে চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে করোনার কারণে লকডাউন হচ্ছে, অন্যদিকে আমাদের পোশাকের প্রধান রফতানি বাজার ইউরোপ আমেরিকায় মহামারি পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে, এসব কারণেই পোশাকের অর্ডার বেড়েছে, রফতানি আয়ও বাড়ছে।
তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে ফলে পণ্যের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানিতে খরচ বেশি লাগছে। এছাড়া সুতার দামও বেড়েছে। এগুলো যদি স্বাভাবিক থাকত তাহলে রফতানি আয় আরও বেশি হতো।
মুদ্রার রির্জাভ ৪৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়ালো
রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আগের মাসে কমার পর আবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার।
এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নকে (এসিইউ) ২ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলারের আমদানি বিল পরিশোধ করার পরে গেলো ৬ মার্চ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৩ দশমিক ৮৯ বিলিয়নে নেমে আসে। এটি গত এক বছরের মধ্যে দেশে সর্বনিম্ন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল।
চলতি (জুলাই-মার্চ) অর্থবছরের নয় মাসে ১৫ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয় এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ এক মাস আগের তুলনায় বৃদ্ধি পাওয়ায় ৩ এপ্রিল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৪ দশমিক ৩০ বিলিয়ন হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি) সূত্র জানায়, রিজার্ভ দিয়ে পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে। অথচ ছয় মাস আগেও ১০ মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে রিজার্ভ ছিল।
তবে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) রেমিট্যান্সের প্রবাহ এখনও নেতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে রয়েছে। এই নয় মাসে প্রবাসীরা ১৫ দশমিক ৩০ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। গত ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে প্রবাসীরা ১৮ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন।
তবে ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চ মাসে ২৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও নয় মাসে অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্স প্রবাহ ১৮ শতাংশ কমেছে।